অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মতে, আনুমানিক ২২.৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে ডাইনেসরের আবির্ভাব ঘটে এবং এরা পৃথিবীতে টিকে ছিল প্রায় ১৫ কোটি বছর । একসময়ে উত্তর মেরু ছাড়া সমগ্র পৃথিবীতেই ডাইনোসরের রাজত্ব ছিল । জলে, স্থলে, আকাশে, বিভিন্ন ধরনের ডাইনোসরের অবাধ বিচরণ ছিল ।

বর্তমানে ডাইনোসরের ৭০০টিরও বেশি প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং নামকরণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক প্রজাতির ডাইনোসর আমরা হলিউডের জুরাসিক পার্ক, গডজিলা, আইস-এইজ, দ্যা গুড ডাইনোসর এর মত বিখ্যাত সিনেমায় দেখেছি । চলুন এরকম কিছু জনপ্রিয় প্রজাতির ডাইনোসর সম্পর্কে জানা যাক ।

১. সবচেয়ে হিংস্র ডাইনোসর - টাইরানোসরাস রেক্স

tyrannosaurus-rex
DataBase Center for Life Science (DBCLS)CC BY 4.0, via Wikimedia Commons

প্রচন্ড রকমের হিংস্র ও ভয়ঙ্কর প্রকৃতির ডাইনোসর ‘টাইরানোসরাস রেক্স’ অনেক জনপ্রিয় সিনেমা, টিভি শোতে দেখা গেছে ।এটি ছিল খুব শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান শিকারী ।এদের হাত ছিল খুবেই ছোট কিন্তু এরা ধারালো দাঁত ও লম্বা লেজ দিয়ে শিকার করত ।মজার ব্যাপার হচ্ছে এই প্রজাতির পুরুষের তুলনায় স্ত্রীগুলো বড় ছিল ।

২. সবচেয়ে বড় ও ভারী ডাইনোসর -আর্জেন্টিনা সৌরস

argentinosaurus
Image by De Nobu Tamura  CC BY 3.0Enlace

বিশ্বের সবচেয়ে বড় (দীর্ঘতম)প্রসস্থ ও সবচেয়ে ভারী ওজনের ডাইনোসর ছিল ‘আর্জেন্টিনা সৌরস (Argentinosaurus)’, যা 40 মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল এবং এর ওজন ছিল প্রায় ৮০-১০০টন পর্যন্ত । যা প্রায় ১৭টি আফ্রিকান হাতির সমতুল্য ছিল। এই ডাইনোসরটি এর titanosaur দলের সদস্য ।আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আমেরিকায় এর অবশেষ পাওয়া গেছে।

৩. সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ও বুদ্ধিমান ডাইনোসর - ট্রোডোন




Alina Zienowicz (Ala z), e-mailCC BY-SA 3.0, via Wikimedia Commons

‘ট্রোডোন’ ছিল সবচেয়ে ছোট আকৃতির ডাইনোসর যা প্রায় ৭.৬কোটি বছর আগে বসবাস করত ।এই ডাইনোসরটি একটি আধুনিক পাখির বড় সংস্করণ বলা যায় । কিছু বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে এই ‘লেসোথোসোরাস’ দলের ডাইনোসরটি বিবর্তনীয় শৃঙ্খলে কুমির এবং পাখি হয়েছে ।এর আকৃতি ছিল সর্বোচ্চ ২মিটার এবং ওজন ছিল সর্বোচ্চ ২-১০কেজি।এর আবার সবচেয়ে স্মার্ট ডাইনোসর হিসেবেও খ্যাতি আছে ।

 

৪. সবচেয়ে বোকা ডাইনোসর - স্টেগোসরাস

Stegosaurus
Image source : wikimedia

‘স্টেগোসরাস’ প্রায় ১৫ কোটি বছর আগে প্রান্তিক জুরাসিক যুগে বসবাস করত। এর পিছনে থাকা বড় বড় টাইলের তৈরি প্লেটের মত ।এগুলো ১মিটার (৩ফুট) পর্যন্ত লম্বা ছিল ।এর মস্তিষ্ক আকার ছিল একটি আখরোটির সমান-মাত্র 3 সেন্টিমিটার দীর্ঘ এবং 75 গ্রাম ওজনের।

 

৫. সবচেয়ে লম্বা ডাইনোসর - সুরুপোডস

Sauropods
Image from PxHere

‘সুরুপোডস’ নামের ডাইনোসর অত্যন্ত দীর্ঘ ঘাড়, ছোট মাথা ও চারটি স্তম্ভের মত পা দেখতে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা প্রাণী জিরাফ এর সঙ্গে মিল পাওয়া যায় ।এগুলো ১৮.৫ মিটার (৬০ফুট) পর্যন্ত লম্বা ছিল ।

 

৬. সবচেয়ে দ্রুততম ডাইনোসর - ড্রোমিসিয়োমিমাস

dromisiomimus
Image from alamy Image ID : F02EWP

"ড্রোমিসিয়োমিমাস" ডাইনো যুগের সবচেয়ে দ্রুততম ডাইনোসর ।এটি অনেকটা ক্যাঙ্গারু ও উটপাখির মিশ্র রূপ । প্রায় ১৪ফুট লম্বা "ড্রোমিসিয়োমিমাস" ৬০কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার গতিতে দৌড়াতে পারত ।

৭. ডাইনোসর যুগের উড়ন্ত প্রাণী - কোয়েটজালোকোলাটাস

quetzalcoatlus
Image from wikimedia by Mark Witton and Darren Naish

সেই ডাইনোসর যুগে বিভিন্ন প্রকার বৃহত্তম সরীসৃপ উড়ন্ত প্রাণীরা আকাশে উড়ে বেড়াত । এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উড়ন্ত প্রাণী ছিল ‘কোয়েটজালোকোলাটাস(Quetzalcoatlus)’ ।এই আশ্চর্যজনক প্রানীটির পাখাগুলোর আকার প্রায় ১৩মিটার পর্যন্ত ছিল তার সত্ত্বেও এর ওজন ১০০কিলোগ্রামের বেশি ছিল না ।তবে এগুলো আসলে ডাইনোসর নয় এগুলো হচ্ছে ‘পার্থোসর’ ।

 

৮. ডাইনোসর যুগের সামুদ্রিক প্রাণী -প্লেসিওসোরিয়াস

plesiosaurs
Image from wikimedia by Creator:Dmitry Bogdanov

ডাইনোসর যুগের জলাভূমিতে বসবাসকারী প্রাণীরা ‘প্লেসিওসোরিয়াস’ নামে পরিচিত । সেসময়কার সবচেয়ে দীর্ঘ প্লেসিওসোরিয়াস ছিল ‘এলাসোসোসোরাস’ যার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১৪মিটার (৪৬ফুট) ।এর মাথা ছোট তবে সাথে দীর্ঘ পাতলা গলা, ছিল শক্তিশালী চোয়ালের তীক্ষ্ণ দাঁত , সরু লেজ এবং পাখাগুলো ঠিক যেন প্যাডেল ।এগুলোও ডাইনোসর নয় মূলত সামুদ্রিক সরীসৃপ প্রাণী ।

 বিলুপ্তির কারণ

প্রচলিত ধারণা মোতাবেক, প্রায় ছয় কোটি বছর আগে অন্তত ১০ কিলোমিটার আকৃতির গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায় ।কিন্তু যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি অব রিডিং’-এর বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের জীবাশ্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেছেন, এর অনেক আগে থেকেই বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়; গ্রহাণুর আঘাতে শুধু সেই প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে ।

মেসোজয়িক যুগের শেষভাগে ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটে । প্রায় একই সময়ে এদের সবগুলো প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ ব্যাখ্যা করা প্রত্নজীববিদ্যার এক জটিল সমস্যা । পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনে ব্যর্থতা বিলুপ্তির প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় । এছাড়াও বেশকিছু নিয়ামক রয়েছে যেমন-রোগ, জাতিগত বার্ধক্য, মহাজাগতিক রশ্মি, ডিমভুক স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবির্ভাব, পাহাড়-পর্বতের উদ্খান, উপমাহাদেশসমূহের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা, সমুদ্র স্তরের নিম্নগামীতা এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য ।