স্টারলিঙ্ক কী? জানুন এটি কিভাবে কাজ করে ও ইন্টারনেট খরচ কত

সূচিপত্র:

পোষ্টটির পোডকাস্ট শুনুন :


ভূমিকা:

আজকের যুগে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি কাজ এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়। কিন্তু পৃথিবীর কিছু এলাকায় এখনও ভালো ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতেই এক বিপ্লবী প্রযুক্তি এসেছে, যার নাম স্টারলিঙ্ক (Starlink)। এটি শুধুমাত্র একটি ইন্টারনেট পরিষেবা নয়, বরং পুরো বিশ্বকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে সংযুক্ত করার একটি উদ্যোগ। এই ব্লগ পোস্টে আমরা জানবো, স্টারলিঙ্ক কী, এটি কীভাবে কাজ করে, বাংলাদেশের জন্য এর গুরুত্ব এবং কেন এটি ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ হতে পারে।

 

starlink-internet-cost-and-how-it-works
AI-generated image from Fotor

স্টারলিঙ্ক কী?

স্টারলিঙ্ক হল স্পেসএক্স (SpaceX) কোম্পানির অধীনে ইন্টারনেট পরিষেবা, যার প্রতিষ্ঠাতা হলেন বিখ্যাত উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক। এটি একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা, যার লক্ষ্য পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় হাই-স্পিড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া। ঐতিহ্যবাহী ইন্টারনেট সেবা ফাইবার ক্যাবল বা মোবাইল টাওয়ারের উপর নির্ভর করে, কিন্তু স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি ইন্টারনেট সংযোগ দেয়। এর ফলে শহর থেকে গ্রাম, এমনকি পাহাড় বা দ্বীপের মতো দুর্গম এলাকাতেও দ্রুত ইন্টারনেট পাওয়া সম্ভব।

স্টারলিঙ্কের মূল বৈশিষ্ট্য:

·         স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে দ্রুত ইন্টারনেট পাওয়া সম্ভব। এটি বিশেষত শহরের বাইরের বা দুর্গম অঞ্চলের জন্য কার্যকরী।

·         সাধারণ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের তুলনায়, স্টারলিঙ্ক অনেক কম লেটেন্সি নিয়ে কাজ করে। এর মানে হল, দ্রুত ডাটা ট্রান্সফার এবং কম ল্যাগ।

·         স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইটগুলি পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে, যার ফলে বিশ্বের যেকোনো স্থানে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া সম্ভব।

·         স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেটের গতি 50Mbps থেকে 300Mbps পর্যন্ত হতে পারে, যা অনেক প্রথাগত ব্রডব্যান্ড সার্ভিসের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত।

 

স্টারলিঙ্ক কীভাবে কাজ করে?

স্টারলিঙ্কের মূল শক্তি হলো এর লো-আর্থ অরবিট (LEO) স্যাটেলাইট। এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী থেকে মাত্র ৫৫০ থেকে ১২০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করে। তুলনা করলে, ঐতিহ্যবাহী স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাগুলো ৩৫,০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকে, যার ফলে গতি ধীর হয়। স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইটগুলো একটি নেটওয়ার্কের মতো কাজ করে এবং লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করে।

 

ব্যবহারকারীদের জন্য প্রয়োজন একটি ছোট ডিশ অ্যান্টেনা (যাকে স্টারলিঙ্ক কিট বলা হয়) এবং একটি মডেম। এই ডিশটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে এবং আপনার বাড়িতে বা অফিসে হাই-স্পিড ইন্টারনেট সরবরাহ করে। সেটআপ প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ – শুধু ডিশটি খোলা আকাশের নিচে রাখুন, অ্যাপের মাধ্যমে সেটিং করুন, এবং আপনি প্রস্তুত!

 

স্টারলিঙ্কের খরচ

স্পেসএক্স বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর পরিষেবা সম্প্রসারণ করছে।  স্টারলিঙ্কের কিটের দাম বর্তমানে বিশ্ববাজারে প্রায় ৫০০-৬০০ মার্কিন ডলার, এবং মাসিক সাবস্ক্রিপশন ৯৯-১২০ ডলারের মধ্যে। স্টারলিঙ্কের খরচ কিছুটা বেশি হলেও, এর সুবিধা অনেক বেশি, বিশেষত যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া কঠিন।

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্টারলিঙ্কের প্রযুক্তি

বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় নেটওয়ার্ক দুর্বল, আর শহরেও ইন্টারনেটের গতি প্রায়ই হতাশাজনক। বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে ফাইবার ক্যাবল বা মোবাইল টাওয়ার পৌঁছায়নি, স্টারলিঙ্ক এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সুন্দরবন বা হাওর অঞ্চলের মানুষ এখন অনলাইন শিক্ষা বা টেলিমেডিসিনের সুবিধা পেতে পারে। তবে, প্রযুক্তির সফলতার জন্য সরকারের নিয়ন্ত্রক অনুমোদন এবং সাশ্রয়ী মূল্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ