সিভি (কারিকুলাম ভেইট), রিজিউম, বায়োডাটা বা জীবনবৃত্তান্ত যে নামেই পরিচিত হোক না কেন এটি প্রার্থী ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি যোগসূত্র । অনেকে মনে করেন সিভি ভালোভাবে লিখতে পারলে চাকরি নিশ্চিত হয়ে যাবে যা একটি ভুল ধারণা । কারণ সিভি হচ্ছে প্রার্থীর ব্যক্তিগত, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্বলিত বিবরণ যা আপনি নিয়োগকারীর নিকট উপস্থাপন করছেন । তাই সিভি = চাকরি নয় বরং সিভি = ইন্টারভিউ । আর ইন্টারভিউ বোর্ড পর্যন্ত যেতে পারলে আপনার স্বপ্নের চাকরিটি পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে । তবে বেশিরভাগ প্রার্থীই সিভি তৈরির সময় কিছু কিছু ভুল করে থাকেন যার কারণে তাদের আবেদনটি রিজেক্ট হয়ে যায় । চলুন জেনে নিই কিভাবে একটি আদর্শ সিভি/রিজিউম তৈরি করা যায় ।

Image by d4rkwzd from Pixabay

সহজবোধ্য রাখুন : নিয়োগকর্তা আপনার সিভি পড়ার বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য সিম্পল ফরমেট/লেআউট/টেমপ্লেট ও ফন্ট ব্যবহার করুন । তাছাড়া লেখার ভাষা যাতে সহজ ও বোধগম্য হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।

হাইলাইট করুন : আপনার জীবনবৃত্তান্ত হচ্ছে আপনার নিজেকে বিপণন করার মাধ্যম । সুতরাং এটি হতে হবে আকর্ষণীয় । তবে চটকদার কোন কিছু যেমন রঙিন কাগজ বা রঙিন কালি ব্যবহার করবেন না । কোন কিছু হাইলাইট করতে হলে সেটিকে বল্ড, ইটালিক বা আন্ডারলাইন করতে পারেন ।

অপ্রাসঙ্গিক ভুল তথ্য পরিহার : মনে রাখবেন আপনার জীবনবৃত্তান্তের মধ্যে যদি কোন বানান ভুল বা ভাষাগত (Grammatical)ভুল থাকে তবে সম্ভাব্য চাকুরিদাতার আপনার সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারণা হবে । এটি প্রকাশ পাবে যে আপনি কোন কাজ নির্ভুলভাবে করতে সক্ষম নন । তাছাড়া চাকুরি সম্পর্কিত অপ্রাসঙ্গিক বা ভুল তথ্য পরিহার করুন ।

তথ্য হালনাগাদ : অনেকেই আছেন সবসময় একটি মাত্র সিভি বিভিন্ন চাকরীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন যা অনেক বড় ভুল । নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সময় সময়ে নিজের সিভিতে তথ্য আপ-টু-ডেট রাখুন ।

একটি জীবন বৃত্তান্ত/সিভি/রিরিউম সুবিন্যস্তভাবে উপস্থাপনে যে যে অংশ থাকে সেগুলো হচ্ছে নিম্নরূপঃ

১. শিরোনাম (Title)

সিভির শুরুতেই আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে পুরো নাম থাকবে (ডাক নাম দেয়া যাবে না) । এটা বল্ড হবে এবং কটেু বড় ফন্টে লিখতে হবে । তারপর থাকবে আপনার বর্তমান ঠিকানা, ফোন নম্বর ও ই-মেইল অ্যাড্রেস ।

২. ক্যরিয়ার উদ্দেশ্য (Career Objective)

এই অংশে আপনি আপনার চাকুরিক্ষেত্রে বর্তমান লক্ষ্য (Immediate goal) উল্লেখ করুন । চাকুরির জন্য উপযুক্ত ইতবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষিপ্তভাবে উল্রেখ করুন । আপনি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানটিকে কি দিতে পারবেন তার ওপর গুরুত্বারোপ করুন, কোম্পানির কাছ থেকে আপনি কি আশা করছেন তার ওপর নয় ।

৩. চাকুরির সার-সংক্ষেপ/অভিজ্ঞতা (Carrer Summary/Experience)

যেসকল ব্যক্তিদের ৪-৫ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা আছে তাদের জন্য এটি বেশি প্রযোজ্য  । এই অংশে আপনি সর্বোচ্চ ৬-৭ লাইনে উল্লেখ করুন । আপনার পূর্ব চাকুরির অভিজ্ঞতার কর্মক্ষেত্রগুলো, পূর্ব অভিজ্ঞতার সাফল্যগুলো (Achievement)সংক্ষেপে তুলে ধরুন (যদি থাকে)। যেসকল তথ্য আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে উল্লেখ করবেন সেগুলো হলো:

- প্রতিষ্ঠানের নাম (Organization name)

- পদবী (Designation)

- সময়কাল (Time period)

- দায়িত্ব (Job responsibility)

- উল্লেখযোগ্য সাফল্য (Special achievement)

 

৪. শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ (Education & Traning)

এই অংশটি সদ্য পাশ করা বা অল্প অভিজ্ঞদের জন্য Experience অংশের আগেই আসা উচিৎ । Education অংশে আপনি আপনার ডিগ্রিগুলোর নাম উল্লেখ করবেন ।

- ডিগ্রির নাম (যেমন: SSC, HSC, B.Com)

- কোর্সের মেয়াদকাল

- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বোর্ডের নাম ।

- পরীক্ষার বছর এবং প্রয়োজনে ফলাফর প্রকাশের সময়

- ফলাফল

৫. অতিরিক্ত তথ্য (Additional Information)

যেসকল তথ্য উপরে উল্লেখিত অংশগুলোর মধ্যে পড়ে না কিন্তু চাকরির সাথে সম্পর্কিত তা এ বিভাগে বর্ণনা করতে হবে ।

- পেশাগত অর্জন (Professional Achievement)

- পদক/সম্মাননা (Award)

- ভাষাগত দক্ষতা (Language Literacy)

- কম্পিউটার দক্ষতা (Computer Skills)

- লাইসেন্স, সরকারি পরিচয়পত্র, প্রকাশিত লেখা ও সত্বাধিকার

- স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ড ইত্যাদি ।

৬. ব্যক্তিগত তথ্য (Personal Information)

এই অংশে পিতা মাতার নাম, বর্তমান/স্থায়ী ঠিকানা, ধর্ম, জন্মতারিখ, জাতীয়তা ইত্যাদি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ।

৭. রেফারেন্স (Reference)

খেয়াল রাখবেন Reference অংশে আপনি আপনার নিকট আত্মীয়দের নাম উল্লেখ করবেন না । আপনাকে আপনার ছাত্র জীবনে বা কর্মজীবনে কাছ থেকে দেখেছে এম ব্যক্তিকেই আপনি Reference হিসেবে উল্লেখ করবেন । অবশ্যই যাদেরকে Reference হিসেবে দিবেন তাদের ফোন নম্বর, ঠিকানা এবং ই-মেইল উল্লেখ করবেন ।