বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব: মহাবিশ্বের জন্ম রহস্যের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

সূচিপত্র:

পোষ্টটির অডিও পডকাস্ট শুনুন

ভূমিকা:

মহাবিশ্বের সূচনা নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং প্রচলিত তত্ত্ব হচ্ছে বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব (Big Bang Theory)। এই তত্ত্ব মতে, বর্তমান বিশাল বিস্তৃত মহাবিশ্ব একসময় একটি অতিক্ষুদ্র, অতিদ্রব এবং অতিউষ্ণ বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত ছিল। প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে সেই বিন্দু থেকেই এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের জন্ম হয়।


AI-generated image from Fotor

এই বিস্ফোরণকে সাধারণ বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। আমাদের পরিচিত যেকোনো বিস্ফোরণ ঘটে একটি নির্দিষ্ট স্থানে এবং বস্তু চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বিগ ব্যাঙ-এর সময় কোনো স্থান বা সময়ের অস্তিত্বই ছিল না। বরং বিস্ফোরণের ফলেই সময় ও স্থানের সৃষ্টি হয় এবং সেইসঙ্গে শুরু হয় মহাবিশ্বের প্রসারণ।

বিগ ব্যাঙ সম্পর্কিত কিছু চমকপ্রদ তথ্য:

  • বিগ ব্যাঙ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন বিজ্ঞানী ফ্রেড হোইল, যদিও তিনি নিজে এই তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন না।

  • বিগ ব্যাঙ একটি বিস্ফোরণ নয় বরং একটি অত্যন্ত দ্রুত প্রসারণ (Expansion) ছিল।

  • মহাবিশ্বের প্রাথমিক কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মূল মৌলিক কণাগুলির সৃষ্টি হয়, যেগুলি পরবর্তীতে পারমাণবিক কণায় রূপ নেয়।

  • আজও মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে এবং এমনকি প্রসারণের গতি দিন দিন বাড়ছে!

এই তত্ত্বকে সমর্থন করে এমন তিনটি শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে:

১. গ্যালাক্সির সরে যাওয়া: আধুনিক টেলিস্কোপে দেখা যায়, আমাদের গ্যালাক্সিসহ সব গ্যালাক্সি একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এর মানে মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। এই পর্যবেক্ষণ থেকেই ধারণা করা হয়, একসময় সবকিছু একটি কেন্দ্রে ছিল।

২. নেপথ্য বিকিরণ (Cosmic Microwave Background): ১৯৬৪ সালে দুইজন বেতার প্রকৌশলী একটি রহস্যময় বেতার তরঙ্গ শনাক্ত করেন, যা আসলে বিগ ব্যাঙ-এর সময়কার তাপের অবশিষ্ট ছাপ। এই বিকিরণের তাপমাত্রা বর্তমানে ২.৭ কেলভিন, যা বিগ ব্যাঙ তত্ত্বের পূর্বাভাসের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।

৩. হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের অনুপাত: মহাবিশ্বে সবচেয়ে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম গ্যাস। এই উপাদানগুলোর অনুপাত বিগ ব্যাঙ পরবর্তী প্রথম কয়েক মিনিটের নিউক্লিওসিন্থেসিস-এর ফল। এই গাণিতিক মিলই তত্ত্বটিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।

বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব কেবল মহাবিশ্বের শুরু নয়, বরং সময়, স্থান এবং পদার্থবিজ্ঞানের জন্মেরও গল্প। এটি আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি এবং আমাদের চারপাশের বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বোঝার এক চমৎকার জানালা খুলে দেয়।

আপনি যদি মহাবিশ্বের রহস্য সম্পর্কে আগ্রহী হন, তাহলে বিগ ব্যাঙ তত্ত্বের এই তথ্যগুলো নিঃসন্দেহে আপনাকে এক বিস্ময়কর জগতে নিয়ে যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ