সেই প্রাচীন গ্রিক যুগ থেকে শুরু করে একুশ শতক পর্যন্ত একটি প্রশ্ন চলে আসছে সেটি হলো, ডিম আগে না মুরগি আগে? এমনকি আমরা এখনও এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আগ্রহী যে ডিম আগে না মুরগি আগে? যদি প্রশ্নটা আমরা সহজভাবে নিই, তবে এর উত্তরও সোজা।

who-came-first-in-the-world-chicken-or-egg-according-to-science
Photo by congerdesign on Pixnio
পৃথিবীতে ডিম পাড়ে এমন প্রাণীর উদ্ভব ৩৪০ মিলিয়ন বছরের আগে থেকে। তার অনেক পরে পৃথিবীতে মুরগির আবির্ভাব। তবে ডিম আগে না মুরগি আগে এই প্রশ্ন আমাদের এক গোলকধাঁধার মাঝে ফেলে দেয়। যেহেতু মুরগির জন্ম ডিম থেকে তবে ডিমের জন্ম কোথা থেকে? অবশ্যই অন্য মুরগি থেকে। যেটির আগমন আবার অন্য কোনো ডিম থেকে। তবে কে আগে আসে ডিম না মুরগি?

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের গবেষণা থেকে জানা গেছে, মুরগির ডিম গঠনের জন্য অন্যতম উপাদান OV-17। যা শুধুমাত্র মুরগির ডিম্বাশয়ে পাওয়া যায়। অর্থাৎ মুরগি ছাড়া মুরগির ডিম গঠন সম্ভব নয়। তবে ডিম আগে না মুরগি আগে সে বিষয় গবেষণা করার আগে আমাদের যেটি নির্ধারণ করতে হবে সেটি হলো মুরগির ডিম বলতে আমরা কি বুঝি? মুরগি যে ডিম পাড়ে তাকে মুরগির ডিম বলে নাকি অথবা যেটি একটি মুরগিকে ধারণ করে তাকে মুরগির ডিম বলে। অবশ্যই সেক্ষেত্রে ডিম তৈরির জন্য OV-17 কোথাও থেকে আসতে হবে। মনে করি একটা হাতি ডিম পাড়ল আর তা থেকে একটা শেয়াল বেরুল তবে একে কি আমরা হাতির ডিম বলব না কি শেয়ালের ডিম?

দুটি প্রাণীর মিলনের মধ্যদিয়ে ডিম উৎপাদনের এ প্রক্রিয়ার তাদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য ডিএনএ-রূপে ডিমে সংরক্ষিত হয়। ডিএনএ অনুলিপনের সময় তা পুরোপুরি একইরকম হয় না। সামান্য কিছু পার্থক্য থাকে। শত শত প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ডিএনএ-তে এই সামান্য সামান্য পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে সম্পূর্ণ নতুন প্রাণীর উৎপত্তি ঘটে। কিন্তু এই পরিবর্তন প্রথম ঘটে ডিমেই। তাই আমরা বলতে পারি মুরগির মতো কাছাকাছি দুটি প্রাণী প্রথম মিলন ঘটায় এবং ডিএনএ-তে সামান্য পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে প্রথম মুরগির জন্ম দেয়। যে মুরগিটি বড় হয় ডিমেই।শুধুমাত্র একবার মিলনের মাধ্যমে ডিএনএ পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে নতুন প্রাণী জন্ম দেয়া সম্ভব নয়। আমরা প্রাণিজগৎকে নানা গ্রুপ বা শ্রেণিতে ভাগ করে থাকি। এর সবই বর্তমান প্রাণিকুলের উপর ভিত্তি করে। কোটি বছর আগে তারা কেমন ছিল সেটির উপর ভিত্তি করে না।

কীভাবে নেকড়ে থেকে খেকশিয়াল ও কুকুরের সৃষ্টি? তারা একই প্রজাতির, কিন্তু যুগের পর যুগ ধরে ঘটেছে এ পরিবর্তন। কিছু বন্য নেকড়ে, কিন্তু অলস, সহজে খাবার জোগাড় করতে গিয়ে ধীরে ধীরে মানুষের পোষ মেনেছে, হিংস্রতা কমেছে-তা থেকে নানাভাবে ডিএনএ পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে কুকুরের জন্ম হয়েছে। অন্য আরেক দল খাবার যেখানে সহজলভ্য সেখানে বাসা করেছে, কিন্তু মানুষের উচ্ছিষ্টের উপর পুরোপুরি নির্ভর করেনি, কিন্তু অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে পড়ে বলে মানুষের প্রতি ততটা হিংস্র হয়নি। এভাবেই ডিএনএ পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে হিংস্র নেকড়ে থেকে শেয়ালের জন্ম হয়েছে। একদিনে শেয়াল বা কুকুর কোনোটারই জন্ম হয়নি। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি মুরগির ক্ষেত্রে দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

১. আদিকালে কিছু ডিম পাড়া প্রজাতির প্রাণী থেকে আদিমুরগি বা মুরগির মতো প্রাণীর জন্ম। তাদের পাড়া ডিমের ডিএনএ-তে শত শত বছর ধরে পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে প্রথম মুরগির জন্ম। সেই প্রথম মুরগি পরবর্তীতে মুরগির ডিম পাড়তে লাগল এক্ষেত্রে মুরগি আগে, ডিম পাড়ে।

২. আবার এভাবেও বলা যায় যে আদিমুরগি বা মুরগির অনুরূপ প্রাণীর পাড়া ডিম থেকে প্রথম মুরগির জন্ম হলো। যেহেতু ডিম থেকে মুরগির জন্ম হলো, তাই আমরা বলতে পারি ডিম আগে। এক্ষেত্রে সেই প্রশ্নটি আবার আমাদের সামনে এসে দাড়াল মুরগির ডিম বলতে আমরা কি বুঝি? যেটি থেকে মুরগির জন্ম হয় না মুরগি যে ডিমটি পাড়ে?

অতএব তা আদি-মুরগির ডিম হোক আর মুরগির ডিম-প্রথম সত্যটি হলো মুরগি হয় ডিম থেকে। আর ডিমই আগে আসে।