পেয়ারা অনেক সাধারণ একটি ফল তাই অনেকে এটিকে অবহেলা করে থাকেন । কিন্তু এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান ও গুণাবলী গুলো জানলে পেয়ারাকে যে আর কখনোই উপেক্ষা করবেন না এটা নিশ্চিত রূপে বলতে পারি । পেয়ারা একটি ভিটামিন - সি আর ময়েশ্চারসমৃদ্ধ ফল । এর উচ্চমাত্রার ভিটামিন - এ ও ‘ সি ’ ত্বক , চুল ও চোখের পুষ্টি জোগায় , ঠান্ডাজনিত অসুখ দূর করে ।

health-benefits-and-nutritional-properties-of-guava
Image by MYCCF from Pixabay

পেয়ারার পুষ্টিগুণ 

ভিটামিন , মিনারেল ( ১০০ গ্রাম ) , ক্যালরি ৭ , ভিটামিন - ২৫০ আই ইউ , থিয়ামিন ০.০৭ গ্রাম , নিয়াসিন ১.২ মিলিগ্রাম , ভিটামিন - সি ৩০২ মিলিগ্রাম , ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম , ফসফরাস ২৯ মিলিগ্রাম , কার্বোহাইড্রেট ১৭.১ গ্রাম , প্রোটিন গ্রাম । 

👉পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন - সি রয়েছে । অন্যান্য সাইট্রাস ফল , যেমন — কমলালেবুর তুলনায় পেয়ারায় ৫ গুণ বেশি ভিটামিন - সি রয়েছে । 

👉 পেয়ারায় রয়েছে ১৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন - সি ।

👉 পেয়ারায় ভিটামিন - এ ও ভিটামিন - বি কমপ্লেক্স রয়েছে । রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে বিটা - ক্যারোটিন । 👉 সেইসঙ্গে রয়েছে ক্যালসিয়াম , ফসফরাস , পটাশিয়াম | ফলিক অ্যাসিড এবং নিকোটিনিক অ্যাসিড ।

রোগ উপশমে পেয়ারা 

👉 হাই ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে । অনেক দিন ধরে মেনস্ট্রুয়েসন - এর সমস্যায় পেয়ারা উপকারী । 

👉রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে । হার্টের সমস্যায় ভুগলে পেয়ারা খেতে পারেন । কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতেও পেয়ারা খেতে পারেন । পেয়ারায় উপস্থিত ভিটামিন - সি সক্রিয় অ্যান্টি - অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে । রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় পেয়ারা । * অ্যাজমা , স্কার্ভি , ওবিসিটি ইত্যাদি অসুখের ক্ষেত্রেও পেয়ারা উপকারী । ডায়াবেটিসতো বটেই , ক্যান্সার এমন কি প্রস্টেট ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে পেয়ারা । কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবারসমৃদ্ধ পেয়ারা ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে । 

👉পেয়ারা পাতার জুস গ্যাস্ট্রোনটেস্টিনাল সমস্যায় উপকারী । কারণ , পেয়ারা পাতায় রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট । এ ছাড়া পেয়ারা পাতা ওজন কমাতে সাহায্য করে । পেয়ারা পাতার জুস সর্দি - কাশি উপশমে সাহায্য করে । আয়রন ও ফাইবারে সমৃদ্ধ পেয়ারা কনস্টিপেশন সারাতে উপকারী । অ্যান্টি - অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পেয়ারা ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রুখতে সাহায্য করে । একই কারণে অনেক বড়ি লোশন বা ফেস ক্রিমের উপাদানে পেয়ারা থাকে । বয়সের সঙ্গে জড়িত নানা রোগ , যেমন — অ্যালজাইমার , ছানি রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে । অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানে সমৃদ্ধ পেয়ারা ডিসেন্ট্রি প্রতিরোধ করে । 

health-benefits-and-nutritional-properties-of-guava
Image by Liza Trinidad from Pixabay

পেয়ারার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো নিচে তুলে ধরা হল 

১। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ : পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে এবং এটি কোষকে রক্ষা করে ও তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে করতে সাহায্য করে । 

২। ডায়াবেটিকের ঝুঁকি হতে রক্ষা করে : এর ফাইবার ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে । এবং শরীরের ডিজেস্টিভ সিস্টেমকেও ভালো রাখে । পেয়ারা শরীরের অতিরিক্ত শর্করা শুষে নিতে পারে । এছাড়াও এতে যে ফাইবার রয়েছে তা বেশ উপকারি । এই বিশেষ ফলটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম । 

৩। চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে : ভিটামিন এ দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে চমৎকার কাজ করে । পেয়ারা Retinol সমৃদ্ধ ফল । তাই আপনি যদি গাঁজর খেতে অপছন্দ করেন তাহলে আপনার দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে পেয়ারা খেতে পারেন । 

৪। রক্তচাপ কমায় : পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে । এটি শরীরের অতিরিক্ত রক্তপাচ কমাতে সাহায্য করে ও রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখে । 

৫। ট্রেস উপাদান কপার সমৃদ্ধ : থাইরয়েড গ্রন্থি কার্যকরী বজায় রাখতে পেয়ারা খুব ভাল উপাদান , এতে ট্রেস উপাদান তামা থাকে । এটি থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করে । 

৬। ম্যাঙ্গানিজের ঐশ্বর্য : পেয়ারা আমরা আমাদের খাদ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি শোষণ করে শরীরের সকল খাবারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে । এটি ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ । এটি পুষ্টির ভাণ্ডার । 

৭। স্নায়বিক আরাম : পেয়ারা একটি ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ ফল । এটা শরীরের পেশী এবং স্নায়ু শিথিল করতে সাহায্য করে । সুতরাং একটি কঠিন কাজ করার পরে , একটি পেয়ারা আপনি আপনার পেশী শিথিল এবং আপনার কর্ম সিস্টেমে একটি চমৎকার শক্তির সাহায্য দিতে সাহায্য করবে । 

৮। রক্ত পরিষ্কার করে : পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , ভিটামিন সি ও লাইকোপিন রয়েছে । এর ফলে রক্ত পরিষ্কার হয় ও ত্বক অনেক বেশি উজ্জ্বল হয় । এছাড়াও লাইকোপিনের সাহায্যে গালে গোলাপী আভা ফুটে ওঠে । 

৯। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে : পেয়ারায় অবস্থিত ভিটামিন সি বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে । এছাড়াও এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম । 

১০। পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে : যেকোন ব্যকটেরিয়া সংক্রমণ বা পেটের গোলযোগে সবচেয়ে কার্যকরী হল পেয়ারা । এই ফলটিতে অ্যাস্ট্রিজেন্ট ও অ্যান্টি মাইক্রোবাল উপাদান থাকে ফলে এটি পাকস্থলীর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে । 

১১। ওজন কমায় : যাদের ওজন অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তারা পেয়ারা খেতে পারেন । পেয়ারা খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন খুব সহজেই ঝড়ানো যেতে পারে ।

১২। ত্বক সুস্থ রাখে:  ত্বককে ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করে । ত্বক , চুল ও দাঁতের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে । পুষ্টির বিচারে পেয়ারা হোক সবার নিত্যসঙ্গী । 

১৩। চুল ভালো রাখে : পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ যা চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে । পেয়ারা নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে । 

১৪। রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করে : পেয়ারায় রয়েছে ক্যারটিনয়েড , পলিফেনল , লিউকোসায়ানিডিন ও অ্যামরিটোসাইড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । ক্ষতস্থান শুকানোর জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা । 

পেয়ারা তাজা রাখতে হলে-

👉 রুম টেম্পারেচারে পেয়ারা রাখুন । 

👉 পাকা পেয়ারা পেপার বা প্লাস্টিক ব্যাগে রেফ্রিজারেটরে স্টোর করলে দু'দিন পর্যন্ত ভালো থাকে । 

👉 পেয়ারার জুস এয়ার টাইট ও ভেপার প্রুফ পাত্রে রাখুন । 

👉 পেয়ারার রং হালকা হলুদ হলে ও কড়া গন্ধ থাকলে বুঝবেন , ওটা পাকা পেয়ারা । 

👉 পেয়ারা কেনার সময় খেয়াল রাখবেন , পেয়ারার রং যেন সুন্দর থাকে । খুব বড় বা খুব ছোট আকারের পেয়ারার পরিবর্তে মাঝারি আকারের পেয়ারা কিনুন । 

👉 পেয়ারার গায়ে যেন কোনো কালো দাগ না থাকে । ওগুলো পেয়ারার পচন শুরুর দাগ । পাকা পেয়ারায় সুন্দর গন্ধ বেরোয় । হাত দিয়ে টিপলে পাকা পেয়ারা সামান্য গর্ত হবে ।