আমাদের দেশে শিশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে । বাড়ি , অফিস , কল - কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হচ্ছে কোনো না কোনো শিশু । এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও শিশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে , যা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায় । এক শ্রেণীর মাদক ব্যবসায়ী মাদক বিক্রি বা মাদক পাচারে শিশুদের কাজে লাগাচ্ছে । শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে । বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে শিশুদের অপরাধপ্রবণ হতে বাধ্য করা হচ্ছে । এসব কাজ আইনের চোখে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ হিসেবে গণ্য হবে । আর এসব নিষ্ঠুরতায় জড়িত ব্যক্তির শাস্তির বিধানও রয়েছে । ১৯৭৪ - এ শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বা শিশুদের অপরাধ করতে বা অনৈতিক কাজে ব্যবহার করার শাস্তি কী- তা রয়েছে । এ আইনের ৩৪ , ৩৫ , ৩৬ , ৩৭ , ৩৮ , ৩৯ , ৪০ , ৪১ ৪২ ৪৩ ৪৪ ৪৫ ধারায় শিশু সম্পর্কিত বিশেষ অপরাধ ও শাস্তির বর্ণনা করা হয়েছে ।


what-is-the-law-against-child-abuse-in-bangladesh
Image by Alexa from Pixabay

১. শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতার দণ্ড : ১৯৭৪ সালের শিশু আইন অনুযায়ী ১৬ বছরের কম বয়স্ক ব্যক্তি শিশু । ১৬ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি যদি কোনো শিশুকে আক্রমণ , উৎপীড়ন অবহেলা , বর্জন অথবা অরক্ষিত অবস্থায় পরিত্যাগ করে অথবা করায় এবং এ ধরনের কাজের ফলে শিশুটির অহেতুক দুর্ভোগ হয় , তাহলে এটা হবে শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা । দুর্ভোগের কারণে যদি শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় তার দৃষ্টি বা শ্রবণশক্তি নষ্ট হয় বা মানসিক বিকৃতি ঘটে তাহলে নিষ্ঠুর আচরণকারী ব্যক্তির শিশু আইনের ৩৪ ধারা অনুযায়ী দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড একসঙ্গে হতে পারে ।

২. শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ : কোনো শিশুকে কোনো ব্যক্তি যদি ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করে অথবা কোনো শিশুর দ্বারা ভিক্ষা করায় অথবা শিশুর হেফাজত তত্ত্বাবধান ও দেখাশোনার জন্য দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি যদি ভিক্ষার উদ্দেশে কোনো শিশুকে আলামত হিসেবে ব্যবহার করে তাহলে ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের ৩৫ ধারা অনুযায়ী ওই ব্যক্তির এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ৩০০ টাকা জরিমানা হতে পারে অথবা উভয় দণ্ডও হতে পারে ।

৩. শিশুর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মদ পান শিশু আইনের ৩৬ ধারায় বলা হয়েছে , কোনো শিশুর লালন - পালনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি প্রকাশ্যে মদ পান করে মাতলামি করলে তাকে ১০০ টাকা জরিমানা করা যাবে । যতবার মদ পান করে মাতলামি করবে ততবারই তাকে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে ।

৪. শিশুকে মাদক বা বিপজ্জনক ওষুধ দেওয়া যাবে না কোনো শিশুকে অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো নেশাজাতীয় সুরা বিপজ্জনক ওষুধ দেওয়া হয় বা দিতে বাধ্য করা হয় তাহলে শিশু আইনের ৩৭ ধারা অনুযায়ী যে ব্যক্তি সুরা বা বিপজ্জনক ওষুধ দেবে বা দিতে বাধ্য করবে , তার এক বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ড হতে পারে । তার জরিমানাও হতে পারে ।

৫. সুরা বা বিপজ্জনক ওষুধ বিক্রির স্থানে প্রবেশ সুরা বা বিপজ্জনক ওষুধ বিক্রির স্থানে কোনো শিশুকে নিয়ে গেলে বা সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলে বা কোনো শিশুকে সেখানে যাওয়ার কারণ ঘটালে দায়ী ব্যক্তিকে শিশু আইনের ৩৮ ধারা মোতাবেক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে ।

৬. বাজি ধরা বা ঋণগ্রহণে উল্কানি দেওয়া শিশু আইনের ৩৯ ধারায় বলা হয়েছে , কোনো শিশুকে কোনো বাজি ধরতে বা এ ধরনের কোনো লেনদেন করতে বাধ্য করা হলে বা উস্কানি দেওয়া হলে বা উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করলে বা কোনো শিশুকে ঋণগ্রহণ করতে উস্কানি দেওয়া হলে দায়ী ব্যক্তিকে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যাবে ।

৭. শিশুর থেকে কিছু কেনা : কোনো শিশুর কাছ থেকে কোনো দ্রব্য কেনা বা বন্ধক নেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ । শিশু আইনের ৪০ ধারায় বলা হয়েছে , যে ব্যক্তি শিশুর কাছ থেকে কিছু কিনবে বা বন্ধক রাখবে তাকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যাবে । জরিমানাও করা যাবে

৮. পতিতালয়ে থাকার অনুমতি চার বছরের বেশি বয়স্ক শিশুকে পতিতালয়ে বাস করতে বা প্রায়ই যাতায়াত করতে সুযোগ বা অনুমতি কেউ দিলে তার দুই বছর পর্যন্ত বা যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড হতে পারে । শিশু আইনের ৪১ ধারা অনুযায়ী এই শাস্তি দেওয়া যাবে ।

৯. অসৎ পথে পরিচালনা : শিশু বালিকাকে অসৎ পথে পরিচালনা করলে বা পতিতাবৃত্তিতে উৎসাহ দেওয়া হলে বা স্বামী ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে অনৈতিক কাজ করায় বা কাজে উৎসাহ দেয় তাহলে দায়ী ব্যক্তিকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যাবে ( শিশু আইনের ৪২ ধারা ) ।

১০. শিশু কর্মচারীকে শোষণ : যদি কেউ কোনো শিশুকে ভৃত্যের চাকরি অথবা কারখানা কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকের কাজে নিয়োগ দেওয়ার ভান করে নিজ স্বার্থে শোষণ করে বা কাজে লাগায় , আটকে রাখে বা শিশুর উপার্জন নিজে নেয় তবে তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে । যদি কেউ একই উদ্দেশে শিশুকে নিয়োগ দিয়ে তাকে অসৎপথে পরিচালিত করে , যৌনকর্মে লিপ্ত করে বা এমন কাজের বুঝুঁকির সম্মুখীন করে তবে তাকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যাবে বলে শিশু আইনের ৪৪ ধারায় বলা হয়েছে ।

১১. পলায়নে সহায়তা : সরকারি কোনো অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে শিশু আটক থাকলে তাকে পলায়নে কেউ সহায়তা করলে বা সহায়তা করতে উৎসাহ দিলে ওই ব্যক্তির দুই মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে বলে শিশু আইনের ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে । শিশুর প্রতি এ ধরনের নিষ্ঠুরতা চোখে পড়লে আপনিও জানাতে পারেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে । আবার দেশে যে সব মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে , সেসব সংগঠনের মানবাধিকার কর্মীকে খবর দিতে পারেন ।