চোখের গোলকের সাদা অংশ এবং চোখের পাতার ভিতরের অংশ পাতলা একটি স্বচ্ছ পর্দা দিয়ে ঘেরা থাকে যার নাম কনজাঙ্কটিভা ( Conjunctiva ) আর এর প্রদাহ বা inflammation ই হলো চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কটিভাইটিস । আমাদের সমাজে এটি খুবই একটি পরিচিত রোগ যার বহুবিধ চিকিৎসা পদ্ধতি অল্পবিস্তর সবাই জানেন । 

how-does-conjunctivitis-spread-what-is-its-prevention-and-treatment
Microrao, CC BY-SA 4.0 , via Wikimedia Commons

আমরা আশেপাশে যে কনজাঙ্কটিভাইটিস এর রোগীদের দেখে থাকি সেটা সচরাচর ভাইরাসের আক্রমনে হয় তবে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, এলার্জী বা আঘাত পাবার কারনেও এ রোগ হতে পারে । যেকোনো বয়সের নারী পুরুষের এ রোগটি যেকোনো সময় হতে পারে তবে অপরিস্কার বা নোংরা জীবন যাপন পদ্ধতি এরোগ হতে সহায়ক ভূমিকা রাখে । 


চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ সমূহঃ 

-সাধারণ ভাবে চোখে চোখ লাল হওয়া । 

-চোখ খচখচ করা 

-চোখ সামান্য ব্যথা করা । 

-চোখে পিচুটি জমা । 

-রোদে বা আলোতে তাকাতে কষ্ট হওয়া ও পানি পড়া । 

-বিশেষ করে রাতে ঘুমের পর সকালে উঠলে চোখের কোণে পিচুটি বা ময়লা জমতে পারে । 

-শিশুদের ক্ষেত্রে চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে । 

-সর্দি ও চোখের চুলকানি একসঙ্গেও হতে পারে । সাধারণ ভাবে এ রোগটি ঋতু পরিবর্তনের সময় দেখা দেয় । অর্থাৎ শীত শেষে গরম যখন পড়তে থাকে সে সময় এই রোগ দেখা দেয় । একই সাথে এ সময় অন্যান্য ভাইরাস ঘটিত রোগ যেমন সর্দি কাশি বা ঠান্ড জ্বর দেখা দেয় ।


কনজাংকটিভাইটিস রোগ কিভাবে ছড়ায় ? 

how-does-conjunctivitis-spread-prevention-and-treatment-in-bangla
Conjunctivitis by Nick Youngson CC BY-SA 3.0 Alpha Stock Images


সরাসরি হাতের স্পর্শ , ফোমাইট , বাতাস , এমনকি হাত - মুখ ধোয়া ও অজু - গোসলের সময় পুকুর , নদী বা সুইমিংপুলের পানির মাধ্যমেও জীবাণুগুলো ছড়াতে পারে । কনজাংকটিভাইটিসে আক্রান্ত চোখে আঙুল বা হাত লাগালে হাতে লেগে থাকা জীবাণু রুমাল , তোয়ালে , গামছা , টিস্যু পেপার , কলম , পেনসিল , বইয়ের পাতা , খাতা , টেবিল , চেয়ার , দরজার সিটকিনি , কলের ট্যাপ ইত্যাদিতে লেগে থাকতে পারে । এগুলোকে তখন চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ফোমাইট । রুমাল , তোয়ালে , গামছা , টিস্যু পেপার দিয়ে আক্রান্ত চোখ মুছলেও এগুলোতে জীবাণু লেগে থাকবে । এসব ফোমাইটের মাধ্যমেও জীবাণু ছড়িয়ে যেতে পারে অন্যের চোখে । এবং এসব কারণে একজনের চোখ ওঠা রোগ হলে তা মহামারি আকারে অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে । শিশু বা বৃদ্ধ কেউই বাদ যায় না । তবে স্কুল বা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অনেকে একসঙ্গে থাকে বলে তাদের একজনের কনজাংকটিভাইটিস হলে অন্যদের মধ্যে রোগটা ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত । ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হলে চোখ ওঠার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে শুরু করে সাত - আট দিন বা চিকিৎসা শুরু করার দু - তিন দিন পর্যন্ত এ রোগ অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে । এটাকে বলে সংক্রমণের সময়কাল । আর ভাইরাসজনিত কারণে হলে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগে থেকে শুরু করে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাত থেকে ১০ দিন পর পর্যন্ত ভাইরাসগুলো অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে । জীবাণু ঢোকার পাঁচ - সাত দিন পর চোখ ওঠার লক্ষণ প্রকাশ পায় । দু - একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কনজাংকটিভাইটিস যদিও তেমন কঠিন রোগ নয় , সাত থেকে ১০ দিনে ভালো হয়ে যায় , তবু এ রোগটি একেবারে কম কষ্টকর নয় ।

 

প্রতিরোধের উপায় 

চোখ ওঠা বা কনজাংকটিভাইটিস প্রতিরোধের উপায় আছে । | সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া প্রতিরোধের খুব একটা ভালো উপায় । যার চোখ উঠেছে , সেও যেমন ঘন ঘন হাত ধোবে ; যার হয়নি , রোগীর সংস্পর্শে আসা এমন সুস্থ লোকেরও তেমনি ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিতে হবে । রোগীর ব্যবহূত রুমাল , তোয়ালে , গামছা , টিস্যু পেপার , চোখের ড্রপ , চোখের কসমেটিকস ইত্যাদি 

 অন্যে ব্যবহার না করার মাধ্যমেও রোগটি প্রতিরোধ করা যাবে অনেকাংশে । আর রোগীর ব্যবহৃত রুমাল , তোয়ালে , গামছা ইত্যাদি ধুয়ে ফেলতে হবে তাৎক্ষণিকভাবে । টিস্যু পেপার ফেলে দিতে হবে নিরাপদ স্থানে । রোগী বা সুস্থ সবারই চোখে হাত বা আঙুল না লাগানো অথবা চোখ না কচলানো — এসব অভ্যাসও প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে বেশ । চোখ ওঠা চোখে ভুলে আঙুল দিলে বা কচলালে সঙ্গে সঙ্গেই হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে । তাতে বিভিন্ন বস্তুতে রোগজীবাণু লেগে যাওয়ার আশঙ্কা কমে , কোনো বস্তুকে ফোমাইটে রূপান্তর করার আশঙ্কা কমে । আর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটাও জরুরি ।

 

চিকিৎসা

ভাইরাস জনিত চোখ ওঠার জন্য সাধারণ ভাবে তেমন কোনো ওষুধের দরকার পড়ে না । কারণ এ জাতীয় চোখ ওঠা সাতদিনের মধ্যেই ভাল হয়ে যায় । তারপরও চিকিৎসক কখনো কখনো এ জাতীয় চোখ ওঠার জন্য এন্টিবায়োটিক ড্রপ দিয়ে থাকেন । এটা দেয়া হয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে । ভাইরাস জনিত চোখের রোগের ফলে অন্য কোনো সংক্রমণ যেনো হামলা করতে না পারে সে জন্যেই এই এন্টি বায়োটিক প্রদান করা হয় । এ ছাড়া চোখ ওঠা ছাড়াও যদি জ্বর বা গলা ব্যাথা জাতীয় উপসর্গ থাকে তবে তার জন্য চিকিৎসক ওষুধ প্রদান করবেন । এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে যদি চোখ উঠে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক অবশ্যই এন্টিবায়োটিক প্রদান করবেন । এ ছাড়া প্রয়োজনীয় আরো ওষুধ দিবেন । চোখ উঠলে গরম পানির সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায় । চোখ ওঠার সাথে সাথে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না । কিন্তু সাতদিনের মধ্যে চোখ ওঠা না গেলে অবশ্য চোখের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে । এ ছাড়া চোখে ওঠার পর স্টেরয়েড জাতীয় কোনো ওষুধ চোখে দেয়া যাবে না । তাতে মারাত্মক কুফল দেখা দিতে পারে । আর কারো চোখ উঠলে তাকে যতোটা সম্ভব একা থাকতে দিতে হবে । আর এটি করতে হবে চোখের রোগের বিস্তার প্রতিহত করার জন্য । চোখ উঠলে কেউ কেউ শামুকের পানি সহ নানা ধরণের টোটকা চিকিৎসা করেন । এ জাতীয় চিকিৎষা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে । না হলে অন্ধ হওয়ার আশংকা সহ নানা ধরণের মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিতে পারে ৷