বইমেলা যেভাবে এলো 

সভ্য সমাজের জন্য বইমেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলেও বইমেলার ইতিহাস আসলে খুব বেশি প্রাচীন নয়। আজ থেকে ৫০০ বছর আগের কথা। খ্রিস্টীয় পনের শতকের। সবেমাত্র জোহানস গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা আবিষ্কার করেছেন। সে সময়ই বিশ্বের প্রথম বইমেলা শুরু হয় জার্মানিতে কেউ কেউ বলেন, জার্মানির লিপজিগ শহরে প্রথম বইমেলাটি হয়েছিল। আবার কারো কারো মতে প্রথমে আসলে শুরু হয়েছিল ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরেই, কিন্তু মাঝে লিপজিগ খুব বড় করে মেলার আয়োজন করায় ওটার নামই লোকে জানত বেশি । প্রথমদিকে এসব মেলা তেমন সাড়া ফেলতে না পারলেও ধীরে ধীরে এটা অনেককে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়। এরপর ১৭ শতকের পর ইউরোপসহ বিশ্বের আরও কিছু দেশ ফ্রাঙ্কফুর্টের আদলে বইমেলার আয়োজন করতে থাকে। এখন তো সারাবিশ্বে বইমেলা আকর্ষণীয় একটা মেলা । 

brief-history-of-book-fairs-in-different-countries
Image from Dhaka Tribune 


একুশে বইমেলার শুরু যেভাবে 

১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি স্বল্প পরিসরে প্রথমবারের মতো গ্রন্থমেলার আয়োজন করে। ১৯৭৪ সালের ১৪-২১ ফেব্রুয়ারি এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনে মুক্তধারা ও পুঁথিঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী চিত্তরঞ্জন সাহা তার প্রকাশিত বই মাটিতে চট বিছিয়ে বিশেষ কমিশনে বিক্রি করেন। ১৯৭৫ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানে তিনি বাংলা একডেমির কাছে বই বিক্রির অনুমতি চান। আর তখন থেকেই বাংলা একাডেমিতে একুশের অনুষ্ঠানমালায়

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এক নতুন যুগের সূচনা করে। পরবর্তী তিন বছরে এর পরিধি আরো বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৮ সালে এসে সরকার একে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থমেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি গ্রন্থমেলা আয়োজনে বাংলা একাডেমির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে অবির্ভূত হয়। ১৯৮৪ সালে গ্রন্থমেলার জন্য বিধিবদ্ধ নীতিমালা প্রণীত হয় এবং গ্রন্থমেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা' ।


নাম কেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা? 

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে শহীদ হন রফিক, জব্বার, বরকত, সালামসহ আরো অনেক তরুণ। সে সংগ্রামে অর্জিত হয় বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় সম্মান। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-এ বাংলাদেশ পায় স্বাধীনতা। নবগঠিত বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক সাহিত্যিক জাগরণের প্রথম প্রকাশ ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা।’ আসলে আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার জন্য যারা নিজেদের প্রাণকে তুচ্ছ করেছিল তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যেই আমাদের এই বইমেলার নাম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা'।

দেশে দেশে বইমেলা 

বই হচ্ছে অফুরন্ত আনন্দ ও জ্ঞানের ভাণ্ডার। বই আমাদের জীবনের সবখানে জড়িয়ে আছে। পৃথিবীর প্রায় দেশেই বইমেলার আয়োজন করা হয়। বিশ্বের শত শত বইমেলা থেকে সুপরিচিত কিছু বইমেলার কথা তুলে ধরা হলো এখানে। 

১. বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা

জার্মান ভাষায় ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলাকে বলে ফ্রাঙ্কফুর্টার বুচমেস। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা প্রায় ৫০০ বছরেরও প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী। বর্তমান সময়ে । এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। 

২. লন্ডন বইমেলা

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার মত বড় না  হলেও এ মেলারও আকৃতি আর গুরুত্ব রয়েছে বেশ। প্রতি বছর মার্চে বা কোনো কোনো সময় অক্টোবরে আয়োজন করা হয় এ মেলার। আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তকমেলা কলকাতা পুস্তকমেলাকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বইমেলা হিসেবে ধরা হয়। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ বুধবার শুরু হয়ে ১২ দিন স্থায়ী হয় এই মেলা ।

৩. হংকং বইমেলা

হংকং ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের উদ্যোগে প্রতি বছর আয়োজিত হয় হংকং বইমেলা। হংকং কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে প্রতি বছর জুলাই মাসে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা এটি আরব বিশ্বের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম বইমেলা। অন্যরকম এক বইমেলা শিশুরা সবসময়ই কমিকসের খুব ভক্ত। কিন্তু অনেকেরই জানা নেই শুধু কমিকসের বই নিয়ে প্রতি বছর মেলা অনুষ্ঠিত হয় জাপান ও হংকংয়ে। তাছাড়া এখানে কমিকস উৎসবও আয়োজিত হয়। হংকংবাসীরা একে বলে এনি-কম হংকং। প্রতি বছর হংকং কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে আগস্ট মাসে এই উৎসব শুরু হয়। এদিকে জাপানে কমিকসের বইমেলাকে বলা হয় কমিকেট বা কমিক মার্কেট । ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই মেলা। জাপানের টোকিও শহরে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।