coca-cola-can
Image by Christopher Bowley from Flickr   

কোমল পানীয় ভোজে পূর্ণতা এনে দেয় । এমনই এক প্রয়োজন থেকে ১৮৮৬ সালে কোকা-কোলা উদ্ভাবন করেন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ফার্মাসিস্ট ‘জন পেমবারডন’ । তবে সমানভাবে উচ্চারণ হবে তার সহযোগী ‘ফ্রাংক এম রবিনসন’ এর নামও । পেমবারডন ঘন ধূসর এই তরলের নাম দেন কোকা-কোলা । কারণ এটি তৈরি করা হয় ‘কোলা বিন’ থেকে । ১৯৮৮ সালে রবিনসনের মৃত্যুর আগে আটলান্টার ব্যবসায়ী এএসজি ক্যান্ডেলারের কাছে কোকা-কোলার ফর্মুলা বিক্রি করে দেন ড.পেমবারডন । যুগ যুগ ধরে একই স্ক্রিপ্ট এবং একই লোগো ব্যবহার করছে কোকা-কোলা । সেই সঙ্গে ধরে রেখেছে স্বাদের ব্যাপরটিও ।

বোতলজাতকরণ

coca-cola-bottle-evolution

১৯৬০ সাল । তখন ছোট-বড় সব শহরের মানুষের পছন্দ ছিল সোডা বা আইসক্রিম । এলাকার দোকনগুলোয় জমে উঠত কার্বনেটেড পানীয় পানের বিষয়টি । তবে ফুড ও আইসক্রিম পার্লারে বোতজাত পানীয় আসার পর জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে সোডা । যখন তারা সোজা আকারের বোতল নিয়ে এলো, তখন এটিকে অন্য ব্রান্ডগুলোর নকল মনে করা হত । তাই ১৯১৬ সালে বাঁকা আকারের বোতল নিয়ে এলো । তা ভোক্তাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেল । ১৯৭৭ সালে এই বোতলটি আনুষ্ঠানিকভাবে কোকা-কোলার ট্রেডমার্ক পেল । সময়ের সঙ্গে একটু পরিবর্তিত হলেও বিশ্বের মধ্যে এখন এটি আকর্ষণীয় বোতল ।

 

বিজ্ঞাপন

১৯০৪ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত কোকাকোলার বিজ্ঞাপন ছিল ডেলিসিয়াস অ্যান্ড রিফ্রেশিং । সেটাই এখন পর্যন্ত চলছে । ১৯৭১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে তরুণরা ইতালির একটি হিল টপে জড়ো হয়ে ‘I’d Like to Buy the world Coke -আই উড লাইক টু বাই দা ওয়ার্ল্ড এ কোক’ গান গায় । এটি ছিল বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ । এতে কোম্পানির ভবিষ্যতের একটি উজ্জ্বল ঝলকানিও ছিল । কোকা কোলার মর্যাদার শক্তি আরও তুঙ্গে ওঠে ১৯৮৮ সালে । যখন অ্যাসোসিয়েটসের তিনটি পৃথক জরিপ হয় । এখানে একে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয়, প্রিয় এবং পরিচিত ট্রেডমার্ক হিসেবে উল্লেখ করা হয় ।

Coca-Cola-Ads-evolution
Image by SenseiAlan from Flickr  

১৯৮২ সালের কোকাকোলার থিম ছিল ‘কোক ইজ ইট (Coke Is It!)’ । এটা বিশ্বজুড়ে চালু করা হয় ১৯৮৭সালের ‘ইউ ক্যান্ট বিট দি ফিলিং(You Can’t Beat the Feeling)’ এবং ১৯৯০ সালের ‘ইউ ক্যানন্ট বিট দি রিয়েল থিং (You Can’t  Beat the Real Thing)’ স্লোগান নিয়ে । তা করা হয় এর আরও জনপ্রিয়তা বাড়াতে । তারপর ‘অলওয়েজ কোকাকোলা (Always Coca-Cola)’ প্রচার চালু করা হয় ১৯৯৩ সালে । একে অনুসরণ করে ‘কোকা-কোলা রিয়েল (Coca-Cola…Real)’ চালু করা হয় ২০০৩ সালে । ‘দি কোক সাইড অব লাইফ (The Coke Side of Life)’ চালু করা হয় ২০০৬ সালে । আর বর্তমানে চলছে ‘ওপেন হ্যাপিনেস’ । কোকা-কোলা কোম্পানি ১৯২০ সালের দিকে গ্লোবাল নেটওয়ার্ক নির্মাণ শুরু করে । বর্তমানে ২ শতাধিক দেশে এক হাজার ৭০০ রকমের পণ্যে পরিণত হয় । এছাড়া এক হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বন্ড রয়েছে এর । বিশ্বে প্রায় কোকা-কোলা প্রস্তুত পদ্ধতিতে সফলভাবে খুব সাধারণ ফর্মুলা প্রয়োগ করা হয় । মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের রয়েছে কোকা-কোলা, ডায়েট কোক, স্প্রাইট, স্প্রাইট জিরো সুগার, ফান্টা ও অন্যান্য পণ্য । ১৩০ বছর ধরে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষের জন্য আনন্দঘন মুহূর্ত নিয়ে আসছে কোকা-কোলা । কোকা-কোলা বিশ্বের সর্বব্যাপী ভোগ্যপণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।

 

কোকা-কোলা সম্পর্কিত কিছু ফ্যাক্ট

১. পানীয়টির নাম ‘কোকা-কোলা’ নেয়া হয়েছে এর প্রধান দুটি উপকরন ‘কোকেন’ ও ‘কেফেইন’ থেকে । কোকেন যা কোকা নামক উদ্ভিদ থেকে আসে এবং কেফেইন যা কোলা নাট (একপ্রকার বাদাম) থেকে আসে ।

২. প্রতিদিন মোটামুটিভাবে ১.৭বিলিয়ন মানুষ কোক প্রোডাক্ট পরিসেবা গ্রহণ করে থাকে ।

৩. সাধারণত সৈন্যদের জন্য ক্যান কোকা-কোলা উদ্ভাবন করা হয়েছিল । ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় খাদ্য রাসনের সঙ্গে কোকাকোলাও বিতরণ করা হত ।

৪. দি কোকা-কোলা কোম্পানি সোডা থেকে শুরু করে এনার্জি ড্রিঙ্কস এবং সয়া ভিত্তিক পানীয় সহ ৩৫০০টিরও বেশি পানীয় পন্য ও ৫০০টির বেশি আলাদা ব্র্যান্ড রয়েছে ।

৫. লাল এবং সাদা কোকা-কোলা লোগো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৯৪% এর কাছে স্বীকৃত এবং ‘ওকে’ শব্দটির পর দ্বিতীয় সবচেয়ে বেশি বোঝা যায় এমন শব্দ হচ্ছে ‘কোকা-কোলা’ ।

৬. গড় হিসেবে বিশ্বের প্রতি একজন ব্যাক্তি প্রতি চারদিনে একটি কোক-কোলা প্রোডাক্ট কিনে থাকে ।

৭. অলিম্পিক গেইমের প্রথম স্পনসর ছিল কোকা-কোলা । ব্র্যান্ডটি ১৯২৮সালের সামার গেইমস ও ১৯৪৮সালের অলিম্পিক গেইমস এর স্পনসর হয়েছিল ।

রেফারেন্স সমূহঃ

https://www.coca-colacompany.com/news/history-of-coca-cola-advertising-slogans

https://www.worldofcoca-cola.com/

https://en.wikipedia.org/wiki/Coca-Cola