কে চায় বুড়িয়ে যেতে! সেই পৌরাণিক যুগ থেকে মানুষ ছুটছে অমরত্বের পেছনে । গতকাল যা অসম্ভব বা অধরা ছিল, আজ তা সহজপ্রাপ্য ও সম্ভব হয়ে ধরা দিচ্ছে । জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, অজানাকে জানার আগ্রহ, জগ ও জীবন নিয়ে গবেষণা থেমে নেই । মানুষ তার বায়োবৃদ্ধিকেও করতে চায় অতিক্রম । পেতে চায় চিরযৌবন । মানুষের নবযৌবনপ্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা আজকের নয়, যুগ যুগ ধরে । ধর্মমতে- মৃত্যু আত্মার দেহত্যাগ হলেও বিজ্ঞানীদের মতে এটি একটি জিনগত বৈশিষ্ট্য ।

 

how-human-will-gain-immortality-in-the-future
Image by Pete 😀 from Pixabay

তার মানে প্রতিটি উচ্চতর জীব এমন কিছু কিছু জিন বহন করছে, যা ওই জীবটির মৃত্যু ঘটায় । এ ধরনের জিনকে লিথ্যাল জিন বা মারন জিন বলে । লিথ্যাল জিন বিশেষ কোনো জিন নয়, খুব সাধারণ একটি জিন, যা মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে ঘটায় অসাধারণ একটি ঘটনা । এখন পর্যন্ত এই মৃত্যুকে পরাজিত করতে বিজ্ঞানীরা নানা রকম প্রতিকার আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন । যাতে বেশ অগ্রগতিও লাভ করেচেন তারা । তবে অমরত্ব চাইলে এখনই কিছু বেছে নেওয়া যেতে পারে । এমন কিছু উপায় নিয়ে এই লেখা ।

১. মানব ক্লোনিং

clone-technology-how-human-will-gain-immortality-in-the-future
Image by Stefan Pütz from Pixabay
ক্লোনিংয়ের বেশ অনেকখানি অগ্রগতি অর্জন করেছেন বিজ্ঞানীরা । বিশেষ করে গরু ও ভেড়ার অযৌন বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে । মানুষের অমর হওয়ার ইচ্ছাটা স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয় । বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে ক্লোনিং হলো একটি মাল্টি সেলুলার অর্গানিজম । এ ক্ষেত্রে দু’জন মানুষেরে শরীর হবে একই কিন্তু মন বা আত্মা হবে আলাদা । পুরোপুরি আলাদা ধরনের কোনো অর্গানিজম এ ক্ষেত্রে দরকার নেই । শুধু আসল শরীরের মধ্যে নতুন করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয় । শুধু প্রতিস্থাপন নয়, এ প্রক্রিয়ায় জন্মানো যায় সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষও । ক্লোনিং প্রক্রিয়ায় জন্ম নেওয়া পৃথিবীর প্রথম ক্লোন মানবকন্যার নাম ‘ইভ’ । যদিও সত্যিকারভাবে মানব ক্লোন করা হয়েছে এ রকম কোনো প্রমাণ নেই, ২০০২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ক্লোনাইড নামক একটি প্রতিষ্ঠান দাবি করে যে, তারা প্রথম ক্লোন মানবশিশু তৈরি করেছে; কিন্তু তারা এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি । তবে যতদূর জানা যায়, এ মানব ক্লোনটি তৈরি করেছে ৩১ বছর বয়স্ক এক নারীর কোষ থেকে । কারণ হিসেবে বলা হয়, ওই নারীর স্বামী প্রজননে অক্ষম ছিল । এরপর ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ক্লোনাইড দাবি করে তারা আরও একটি মানব শিশু ক্লোন করেছে জাপানের ২ বছর বয়সের এক বাচ্চার কোষ থেকে যে, ২০০১ সালে অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়, যদিও এ ব্যাপারে আর কোনো তথ্য তারা প্রকাশ করেনি ।বর্তমানে মানব ক্লোনিং সারা বিশ্বে (ডেনমার্ক ছাড়া) নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কারণ এর সঙ্গে নৈতিকতা ও মানবিকতা জাড়িত ।

 

২. প্যানাসিয়া

প্যানাসিয়া আসলে গ্রিক পুরাণের একজন দেবীর নাম । দেবী প্যানাসিয়া একধরণের তরল পদার্থ খাইয়ে মানুষের যাবতীয় অসুখ-বিসুখ ভালো করে দিতে পারতেন! বাস্তব জীবনের সেই প্যানাসিয়ার সন্ধান পাওয়া হয়ে ওঠেনি এখনও ।কিন্তু বিজ্ঞানীরা প্যানাসিয়ার সে দুর্লভ পানীয়র সন্ধানে ছুটছেন। সে চেষ্টার অংশ হিসেবে প্যানাসিয়া নামটি ঢুকে গেছে চিকিসা বিজ্ঞানে । ভারতীয় লোকগল্পেও এধরণের ফলের কথা উল্লেখ পাওয়া যায় । 

 

৩. ন্যানোবোট

nano-bot-tech-how-human-will-gain-immortality-in-the-future
Image by Pete 😀 from Pixabay

ন্যানোবো হচ্ছে একটি ছো্ট্ট যন্ত্র, যার নকশা বা ডিজাইন করা হয়েছে এমনভাবে যাতে সহজে শরীরের সঙ্গে সেটে দেওয়া যায় । এ পদ্ধতি অনুযায়ী লাখ লাখ ন্যানোবোট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবে আমাদের রক্তে । কৃত্রিম হৃপিন্ড সংযোজনসহ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা জীবাণু নিধন-এসবই করবে ন্যানোবোট । ২০৪৫ সালের মধ্যে মানুষ এ পদ্ধতিতে অমরত্বের সূত্র খুঁজে পাবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা । ন্যানোবোট তার প্রোগ্রামিং অনুযায়ী চলবে । মানুষ আহত হলে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে সেরে উঠবে। 

 

৪. সাইবার্গ

সাইবারনেটিক্স বা সাইবর্গ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এগিয়ে গেছেন বহুদূর । এটি এখন কেবল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতেই নয়, বাস্তবেও মিলছে । বিশ্বের প্রথম সাইবর্গ হচ্ছেন প্রফেসর কেভিন ওয়ারউইক । তার বাহুতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে একটি চিপ । এর মাধ্যমে তিনি একটি রোবটিক বাহু নিয়ন্ত্রণ করতে পারনে । মানবদেহে রয়েছে বিপুল পরিমাণ কোয়ান্টাম এবয় বায়োলজিক্যাল স্টোরেজ ও পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র বা ইলেকট্রিক্যাল ফিল্ড । তাই তাত্ত্বিকভাবে মানবদেহে প্রোগাম সেট করা এবং ডাটা প্রসেস করা সম্ভব । আর এটি করতে পারলেই বিকট দর্শন যন্ত্রপাতিসদৃশ সাইবর্গের পরিবর্তে প্রতিটি মানবদেহকেই পরিণত করা যাবে সাইবর্গে । প্রথম পর্যায়ে দেহের ভেতরে মাইক্রোচিপ স্থাপনের মাধ্যমে মানবদেহকে সাইবর্গে পরিণত করার কথা ভাবা হলেও এর বিকল্প চিন্তাও চলছে । সে ক্ষেত্রে দেহের ভেতরে চিপ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হবে না । কেবল সাধারণ বায়োলজিক্যাল প্রোগ্রামিংই যথেষ্ট হবে । পুরো বিষয়টিই অস্বাভাবিক এবং অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু দূর ভবিষ্যতে এটাই সত্যি হতে যাচ্ছে । গবেষকরা সে লক্ষ্য পূরণেই কাজ করে চলেছেন ।

 

৫. ক্রায়োনিক্স

ব্যাঙের শীতঘুমের কথা আমাদের শুনা । সায়েন্স ফিকশন প্রায়ই দেখা যায়, স্পেসশিপের বরফাচ্ছাদিত বিশেষ শীতল কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে একদল মানুষ । যারা কি-না ঘুমিয়ে ছিল বছরের পর বছর । এখন পর্যন্ত জীবিত মানুষ এভাবে জিইয়ে রাখার পদ্ধতি আবিষ্কার করা না গেলেও মৃতদেহকেই আপাতত শুইয়ে দেওয়া হচ্ছে শীতল কক্ষে । ঠিক মিসরীয় মমিদের মতো । কী আশায় এসব মৃতদেহ ‘জীবিত’ রাখা হচ্ছে।আশা একটাই, যদি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি দিয়ে দেহটাকে কোনোভাবে জাগিয়ে তোলা যায়! হাজার বছর আগে নিজেদের মমি বানিয়ে ঠিক যেমনটা আশা করেছিল মিসরীয়রা! প্রযুক্তির নাম ক্রায়োনিক্স । অবশ্য একে প্রযুক্তি না বলে কিছুটা বিজ্ঞান, কিছুটা বিশ্বাস বলা ভালো । কেননা ‍মৃতদেহ সংরক্ষণে আগাগোড়া বিজ্ঞানের নিয়ম মানা হলেও আবার জাগিয়ে তোলার ব্যাপারটি নেহাতই বিশ্বাস । আর সেই বিশ্বাসের খাতিরে লাখ লাখ ডলার যারা খরচ করতে চান, তাদের জন্যেই ক্রায়োনিক্স ।

cryogenics-how-human-will-gain-immortality-in-the-future
Image from Wikipedia

এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২৫০টিরও বেশি মৃতদেহ ক্রায়োনিক্স করে রাখা হয়েছে । ক্রায়োনিক্স করার জন্য বুক করেছেন আরও প্রায় ১ হাজার জন । যে কেউ এটা করতে পারে । তবে সম্পূর্ণ শরীর সংরক্ষণের প্রাথমিক খরচ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ ডলার পর্যন্ত ।প্রতি বছর আবার গুনতে হবে সংরক্ষণ ফি। এর জন্য মৃত্যুর আগে ব্যাংকে মোটা অঙ্কের টাকা রেখে যেতে হবে ।