what-is-plasma-therapy-and-donation-in-bengali
Image credit : istockphoto.com/eldemir

প্লাজমা

প্লাজমা হচ্ছে রক্তের বৃহত্তম অংশ । আপনার রক্তের ৪৫% ভাগ হচ্ছে লোহিত বা লাল রক্তকোষ, শ্বেত বা সাদা রক্তকোষ এবং প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা ।আর সমগ্র রক্তের অন্য ৫৫% ভাগ আলাদা করলে এটি হলুদ বর্ণের দেখায়; রক্তের এই তরল অংশকে প্লাজমা বা রক্তরস বলে । রক্তকনিকাগুলো এই রক্তরসে ভাসমান থাকে ।


প্লাজমার উপাদান

রক্তরসের প্রায় ৯০% পানি, বাকি ১০% দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে বিভিন্ন রকমের জৈব এবং অজৈব পদার্থ । অজৈব পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থের আয়ন, যেমন-সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ক্লোরিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, আয়োডিন এবং C2 , CO2 এবং N2 জাতীয় গ্যাসীয় পদার্থ । জৈব পদার্থগুলো হলো-

১. খাদ্যসার : গ্লুকোজ, অ্যামিনো এসিড, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন ইত্যাদি ।

২. রেচন পদার্থ : ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি । 

৩. প্রোটিন :ফাইব্রিনোজেন, গ্লোবিউলিন, অ্যালবুমিন, প্রোথ্রম্বিন ইত্যাদি ।

৪. প্রতিরক্ষমূলক দ্রব্যাদি : অ্যান্টিটক্সিন, অ্যাগ্লুটিনিন ইত্যাদি ।

৫. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির নিঃসৃত বিভিন্ন হরমোন ।

৬. কোলেস্টেরল, লেসিথন, বিলিরুবিন ইত্যাদি নানা ধরনের যৌগ ।


প্লাজমা বা রক্তরসের কাজ

১. রক্তকনিকাসহ রক্তরসে দ্রবীভূত খাদ্যসার দেহের বিভিন্ন অংশে বাহিত করা ।

২. টিস্যু থেকে বর্জ্য পদার্থ নির্গত করে, সেগুলো রেচনের জন্য বৃক্কে পরিবহন করা ।

৩. শ্বসনের ফলে কোষের সৃষ্ট CO2 কে বাইকার্বনেট হিসেবে ফুসফুসে পরিবহন করা ।

৪. রক্ত জমান বাধাঁর প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো পরিবহন করা ।

৫. হরমোন, এনজাইম, লিপিড প্রভৃতি দেহের বিভিন্ন অংশে বহন করা ।

৬. রক্তের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা ।


প্লাজমা (কনভ্যালসেন্ট) থেরাপি

যেকোনো ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য প্লাজমা থেরাপির মূখ্য হচ্ছে দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি করা । অ্যান্টিবডি হচ্ছে ওয়াই(Y) আকৃতির প্রোটিন যা কোন ব্যক্তি পূর্বে যে কোন ভাইরাসে দ্বারা সংক্রমিত হয়েও ভাইরাসের বিরুদ্ধে ন্যাচারেল প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়েছিল । এরকম সুস্থ হওয়া রোগীদের প্লাজমা অ্যান্টি-ডোজ হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেই সব রোগীদের মধ্যে যাদের ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই ।

what-is-plasma-therapy-and-donation-in-bengali
image credit : istockphoto.com/10174593_258

প্লাজমা থেরাপির ঝুঁকি সমূহ 

প্লাজমা অন্যান্য অনেক অবস্থার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে । যেহেতু প্লাজমা দাতা সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি সেরে এসেছেন তাই এর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে খুব কম থাকে । গবেষকদের মতে, কনভ্যালসেন্টস প্লাজমা থেরাপিতে নিম্নলিখিত ঝুঁকিসমূহ বহন করে :  

-দুর্বল অনুভূতি : প্লাজমা এক্সেচেঞ্জের সময় রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে । ফলে মাথা ঘুরা বা ঝিম ধরা, বমি বমি ভাব ও শারিরিক ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে । তাই থেরাপির পূর্বে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন । 

-এলার্জি প্রতিক্রিয়া : এলার্জিক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

-ফুসফুসের ক্ষতি ও শ্বাসকষ্ট : তীব্র এলার্জিক সমস্যার সাথে শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের ক্ষতি সাধণ করতে পারে ।

-এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি ও সি সংক্রমণ : এই সংক্রমণের ঝুঁকি কম কারণ প্লাজমা ডোনেট করার পূর্বে দাতার এই সমস্ত পরীক্ষা করা হয় । যদিও ব্যতিক্রম ঘটতে পারে তাই প্লাজমা ডোনেটের পূর্বে এফডিএ দ্বারা বর্ণিত নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য প্রয়োজনীতাগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে । 

চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি প্রায় শতবছরও পুরনো ।এর আগে এইচ১এন১ ভাইরাস ইনফেকশন (২০০৯), কাওয়াসাকি রোগ, ইবোলা ভাইরাস (২০১৪), মার্স (২০১৫) এবং বর্তমান করোনা ভাইরাস (২০২০) (কোভিড-১৯)প্রতিরোধে প্লাজমা থেরাপি ব্যবহৃত হচ্ছে ।তবে মনে রাখতে হবে এটি এগুলোর সম্পূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি নয় বরং একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা । 


রেফারেন্সসমূহ : 

https://en.wikipedia.org/wiki/Plasmapheresis 

https://www.who.int/csr/resources/publications/ebola/convalescent-treatment/en/ 

https://www.donatingplasma.org/donation/what-is-plasma