how-subconscious-mind-works-in-bengali

সমস্যার মাঝেই আমাদের সমাধানের সূত্র । প্রশ্নের ভেতরই লুকিয়ে থাকে উত্তর । আপনি যদি কঠিন সমস্যায় পড়ে থাকেন এবং পরিত্রাণের কোনো পথ খুঁজে না পান, তাহলে মনে করুন আপনার অবচেতন মন সব জানে, সব দেখে । অবচেতন মনের ওপর যদি আস্থা থাকে, তাহলে সমস্যা মোকাবিলায় পিছপা হবেন না । কারণ সেই আপনাকে আলোর পথ দেখাবে ।


অভ্যাস তৈরি করা এবং অভ্যাস ত্যাগ করা :

আমরা সবাই অভ্যাসের দাস । অভ্যাস আবার অবচেতন মনের সৃষ্টি । সচেতনভাবে আমরা যখন কোনো কাজ করি, তখন সে কাজটা অবচেতন মনের ওপর দারুণভাবে গেঁথে যায় । ফলস্বরূপ উক্ত কাজের দাস হয়ে যাই আমরা । আর অভ্যাস এই ভাবেই তৈরি হয় । কাজেই খারাপ কাজ বারবার কখনই করবেন না । কথাটা ভালোমতো মনে রাখুন । যারা সিগারেট খান, তারা কিন্তু প্রথমে একটা সিগারেট দিয়েই শুরু করেছিলেন । তারপর এ কাজটা তারা বারবার করেছেন । দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর তারা সিগারেট খাওয়া চালিয়ে গেছেন । অবচেতন মন সেটা স্বাভাবিক একটা কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছে । ফলে সিগারেট খাওয়াটাকে একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে । এখন সিগারেট বরং আপনাকে খাচ্ছে। কারণ অবচেতন মন খারাপ কোনোটিই বোঝে না । আপনার চিন্তার প্রতিফলন ঘটে আপনার কর্মে । আর কর্মটা নিয়ন্ত্রণ হয় আপনার অবচেতন মনের মাধ্যমে । আপনি যদি একটা ভালো কাজ বারবার করেন, তাহলে সেটা আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে । আবার একইভাবে আপনি যখন একটা খারাপ কাজ বারবার করেন, তাহলে সেটাও আপনার অভ্যাসে পরিণত হয় ।


অবচেতন মন যেভাবে কাজ করে 

অবচেতন মন কিভাবে কাজ করে? তা এক লোকের গল্পের মাধ্যমে বললে বুঝতে হবে । গল্পটা সত্যি ।

মি.জোনস ছিলেন অ্যালকোহোলিক-অর্থাৎ মদ খাওযা যার এক নম্বরের কাজ । মদ খাওয়ার একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা তার মনে সবসময় কাজ করতো । এতে একটানা দু’সপ্তাহ পর্যন্ত তিনি মাতাল থাকতেন । ফলে পরিবার থেকে তিনি বিছিন্ন হয়ে পড়লেন । মেয়ে ও স্ত্রী তার থেকে দূরে সরে গেল । তারপরও লোকটা মদ খাওয়া ছাড়তে পারলেন না । 

how-subconscious-mind-works-in-bengali


এই বাজে অভ্যাসটা তিনি নিজে শুরু করেছিলেন । ভেবেছিলেন মদ খাওয়াটা তিনি তার ইচ্ছামতো ছেড়ে দিতে পারবেন ।প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির জোরে মাঝে মাঝে এ বাজে অভ্যাস থেকে দূরে থাকলেও, পরবর্তীতে তার অবস্থা আরো অবনতির দিকে গেল । তিনি মদ খাওয়া বাড়িয়ে দিলেন । এবং নিজেকে ভাবতে লাগলেন একজন অসহায় মানুষ হিসেবে । তিনি ভাবলেন, এই বাজে অভ্যাস থেকে তিনি আর কোনদিনই মুক্তি পাবেন না । 

যেভাবে লোকটা মদ খাওয়া ছেড়ে দিল : অবশেষে একদিন তিনি বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী জোসেফ মারফির সাথে দেখা করলেন । মি.মারফি তাকে চেতন এবং অবচেতন মনের ভারসাম্যের রহস্যটা বুঝিয়ে দিলেন । মি.জোনস ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন । তার অবচেতন মন থেকে মদ খাঁওয়ার চিন্তা বা ছবিটা দূর করতে হবে, তার বদলে সেখানে প্রবেশ করাতে হবে ভালো কিছুর চিন্তা বা ছবি । কারণ অবচেতন মন শূন্য থাকতে পারে না । এ ব্যাপারটা বোঝার পর জোনস কিছুটা সাহসী হয়ে উঠলেন । মারফি তাকে বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে অবচেতন মনের ভেতর সহজে ঢোকা যায় । 


মি.জোনসের মানসিক শক্তি : এরপর মি.জোনস নতুন এক অভ্যাস শুরু করলেন । শরীর ও মন হালকা করে চলে গেলেন মেডিটেশনে । তারপর মনের মণিকোঠায় অর্থাৎ অবচেতন মনে তিনি তার নতুন ছবিটা দেখতে শুরু করলেন । তার মনে তীব্র বিশ্বাস যে, অবচেতন মন তাকে ঠিকই আলোর পথ দেখাবে । তিনি কল্পনা করতে লাগলেন তিনি মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন । ফলে তার মেয়ে তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে । তার স্ত্রীও তার কাছে ফিরে এসেছেন । 

এ কাজটা তিনি নিয়মিতভাবে করতে লাগলেন । অবচেতন মনকে তিনি প্রতিনিয়ত তার প্রিয় ছবিটার কথা মনে করিয় দিতে লাগলেন । যখন তার মন মদ খাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠত, তখনই তিনি এ কাজটা করতে লাগলেন । তার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল তার মেয়ে ও স্ত্রীর কথা, তার হাসিখুশি চেহারার কথা, তার বাড়ির উৎসবের পরিবেশের কথা । এসব ছবি তার মনে স্পষ্ট হতে লাগল তার মন থেকে মদ খাওয়ার চিন্তাটা তত তীব্রভাবে দূর হতে লাগল । ধীরে ধীরে কিন্তু সুনিশ্চিতভাবে তার মন পুনগঠিত হতে লাগল । তার মনে থেকে মদ খাওয়ার ছবিটা দূর হতে লাগল । মি.জোনসের আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো । এবং আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, তিনি মদ খাওয়া ছেড়ে দিলেন । মাদকতার সব কুচিন্তা তার মন থেকে চিরতরে দূর হয়ে গেল । তার মেয়ে ও স্ত্রী তার কাছে ফিরে এল । মি.জোনস এখন একজন সফল এবং সুখী মানুষ । কারণ তিনি বর্তমানে এক নামকরা কোম্পানির প্রেসিডেন্ট । আর কখনো যদি মদ খাওয়ার ইচ্ছা তার মনে জাগ্রহ হয়, সাথে সাথে তিনি তার পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধির ছবিটা চালু করে দেন । এর বেশি কিছু আর তাকে করতে হয় না । কারণ তিনি জানেন শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার অবচেতন মনের শক্তির কথা । আর তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মারফির কাছে ।


বাজে অভ্যাস থাকলে তা স্বীকার করুন : 

আপনি যদি মাদকসক্ত হন, তাহলে সেটা অকপটে স্বীকার করুন । মাদকাসক্ত ব্যক্তির প্রধান সমস্য সে সহজে তার অভ্যাসের কথা স্বীকার করে না । ফলে তারা জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ান । বেঁচে থাকেন আধমরা হয়ে । অথচ সমস্যার কথা স্বীকার করলে সমস্যার অর্ধেকটা সমাধান হয়ে যায় । তারপর দৃঢ় মনোবল নিয়ে নিজেকে এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য পথ খুঁজতে হবে । প্রয়োজনে সাহায্য নিতে হবে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির । যেমনটা নিয়েছিলেন মি.জোনস । তারপর সাহায্য নিতে হবে অবচেতন মনের । কারণ অবচেতন মনেই সৃষ্টি হয়েছিল তাদের বাজে অভ্যাসের ।


তিনটি জাদুকারী পদক্ষেপ :

১. শরীর ও মনকে শান্ত করুন । ঘুমঘুম অবস্থায় চলে আসুন । এই শান্ত নীরব অবস্থায় আপনি আসলে দ্বিতীয স্তরে যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন ।


২. স্মৃতি থেকে কয়েকটি অসাধারণ লাইন খুঁজে বের করেন । লাইনগুলো বারবার উচ্চারণ করুন । ‘আমি খুশি । আমার মন জুড়ে শান্তি বিরাজ করছে । এর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই ।’ এই লাইনগুলো বারবার বলুন । মনের অস্থিরতা দূর করার জন্য লাইনগুলো জোরে জোরে বলুন । এগুলোর প্রত্যেকটির বানান পর্যন্ত খেয়াল করুন । এভাবে পাঁচ মিনিট থাকুন । এরপরে আপনি অবচেতন মনে প্রবেশ করতে পারবেন খুব সহজেই । এখন আপনি আপনার মনকে সাজেশন দিতে পারেন । আপনি যা চান তাই কল্পনা করতে থাকুন ।


৩. ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি এ কাজটা করতে পারেন । বিখ্যাত জার্মান লেখক গ্যোটে এ কাজটা করতেন । কল্পলোকে আপনার প্রিয় কোনো বন্ধুর কথা চিন্তু করুন । তাকে ফুটিয়ে তুলুন আপনার কল্পনায় । দেখুন, সে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । সে আপনাকে বলছে, ‘কংগ্রাচুলেশন, বন্ধ!’ আপনি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন, আপনার বন্ধুটি হাসছেন । আপনি তার কন্ঠস্বরও শুনতে পাচ্ছেন । আপনি তার হাত ধরে আছেন । বন্ধু আপনাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে, কারণ আপনি সমস্ত বাজে অভ্যাস থেকে নিজেকে মুক্ত করছেন ।শব্দটি বারবার শুনুন, যাতে আপনার অবচেতন মন নাড়া দেয় । প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে এ কাজট করুন । দেখবেন আপনার আবেদনে আপনার অবচেতন মন সাড়া দিচ্ছে ।


হতাশ হবেন না, চেষ্টা করে যান : 

যখন ভয় আপনাকে গ্রাস করতে চাইবে, যখন অশান্তি আর হতাশা মনকে বিষিয়ে তুলতে চাইবে, নিজের মনচ্ছবি আর লক্ষ্য ঠিক রাখুন । হতাশ না হয়ে অবচেতন মনের সীমাহীন ক্ষমতার কথা কল্পনা করুন । যে অবচেতন মনকে আপনি আপনার চিন্তা ও কর্ম দ্বারা পরিচালিত করতে পারেন-সেই অবচেতন মনের কথা চিন্তা করুন । তাই সাহসী হোন,আত্মবিশ্বাসী হোন । আপনার জয় অনিবার্য ।