গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে তরমুজের ‍জুড়ি মেলা ভার । তরমুজ একটি শক্তিশালী ফল যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল । তরমুজ এর বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা আপনার মস্তিষ্ক থেকে পা পায়ের পাতা পর্যন্ত প্রতিটি সেলকে কার্যকারি করে তুলে ।একমাত্র গ্রীষ্ম ঋতুতেই এ ফল জন্মে । এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি, ভিটামিন এবং খনিজ ।  এই ফলে শতকরা প্রায় ৯২ ভাগ পানি আছে । তাই তরমুজ খেলো সহজেই পানির তৃষ্ণা মেটে । তরমুজের বিশেষ কয়েক ধরনের অ্যামাইনো এসিড নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে রক্তের স্বাভাবিক কার্যপ্রাণালী বজায় রাখে । তরমুজের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Citrullus lanatus এবং ইংরেজি নাম হচ্ছে Watermelon . এই ফলে এ ৬% চিনি, ৯২% পানি এবং অন্যান্য জিনিস ২% । ভিটামিন এ, সি, বি২, বি৬, ই ও ভিটামিন সি; কি নেই এ ফলটিতে! আরও আছে পাটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, লাইকেপিনসহ নানা উপাদান । স্বল্প ক্যালোরিযুক্ত এ ফলটি আপনার ওজনকেও রাখবে নিয়ন্ত্রণে ।


nutrition-and-benefits-of-watermelon-in-bangla
Image by Adina Voicu from Pixabay

 

তরমুজ এর স্বাস্থ্য উপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলোঃ

১. পানিশূন্যতা দূর করে

তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে । গরমের সময় যখন ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায় তখন তরমুজ খেলে শরীরের পানিশূন্যতা দুর হয় । ফলে শরীরর থাকে সুস্থ ও সতেজ ।

২. প্রদাহবিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমর্থন

তরমুজে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী । তরমুজ ফ্ল্যাভোনয়েড (flavonoids), ক্যারটিনয়েড (Carotenoids), ট্রিটেপেনইডিস (triterpenoids) এবং ফেনোলিক (Phenolic) এর মতো যৌগের সমৃদ্ধ ফল । ফলে শরীরের যে কোন প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে । অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ তরমুজ খেলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস জনিত অসুস্থতা কমে যায় । এছাড়াও নিয়মিত তরমুজ খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় ।

৩. কার্ডিওফাস্কুলার ও হাডের স্বাস্থ্য রক্ষা করে

তরমুজ বিশেষ করে আমাদের কার্ডিওভাসকুলার -এর জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং বর্তমান সময়ে দেখা গেছে এটি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যেও অনেক বেশি প্রয়োজনীয় । তরমুজ ভাসডিলেশন (Vasodilation) এর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ উন্নত করে ও কার্ডিওভাসকুলার এর সাথে সম্পর্কিত ফাংশনসমূহ উন্নত করে । তাছাড়া লিকোপেন সমৃদ্ধ খাবারের আরেকটি গুন হলো হাড়ের গঠন শক্ত ও মজবুত করে । এটি হাড়ের অক্সিডেটিভ উপাদান দূর করে, যা হাড়ের ব্যাথার জন্য দায়ী । তরমুজ পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ফল তােই হাড়ের ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং হাড়ের জয়েন মজবুত করে । 

৪. বলিষ্ঠ পারফর্মেন্স উন্নত করে

তরমুজ ছিটরুলীনের একটি প্রাকৃতিক উৎস । ছিটরুলীনে যে অ্যামাইনো এসিড রয়েছে তা ব্যায়াম করার সময় শরীরকে বলিষ্ঠ রাখে ও শরীরের রক্তের গতি ঠিক রাখতে সাহায্য করে । শরীরের হারমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে তরমুজের কোন জুরি নেই ।

৫. হার্ট ও কিডনির সুস্থতায়

তরমুজ হার্টের জন্য ভালো । এটি রক্তবাহী ধমনীকে নমনীয় ও শীতল রাখে । স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে এ ফলটি ।

কিডনির জন্য বেশ উপকারি ফল তরমুজ । ডাবের পানির যে গুণাগুণ, তরমুজেও রয়েছে সেই গুণাগুণ । কিডনি ও মুত্রথলিকে বর্জ্যমুক্ত করে ফলটি । কিডনিতে পাথর হলে, চিকিৎসকরা ডাবের পানি, তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।

nutrition-and-benefits-of-watermelon-in-bangla
Image by Mary Berg from Pixabay

৬. শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে

অনেকদিন ধরে যারা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন এই ফলটি খাবেন । দেখবেন এটি আপনার শরীরে ভিটামিন সি’র অভাব পূরণ করে হাঁপানি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে ।

৭. রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে

তরমুজ রক্তচাপ কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে । তরমুজে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকায়, তা উচ্চ রক্তচাপ কমায় ।

৮. ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ করে

তরমুজ খেলে ত্বক উজ্জ্জল ও সুস্থ থাকে । তরমুজের আছে দারুন ময়েশ্চারাইজিং ক্ষমতা ।কারণ ভিটামিন এ ত্বককে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে ।  এর ফলে এটি ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে । তরমুজের রস সূর্যের তাপের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ত্বককে রক্ষা করে ।

৯. যৌনশক্তি বাড়ায়

টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে,  যারা যৌনশক্তির দিক থেকে দুর্বল তাদের জন্য তরমুজ প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে । একটি তরমুজে প্রচুর পরিমাণে সিট্রোলিন নামের অ্যামািইনো এসিড থকে যা ভায়গ্রার বিকল্প হিসেবে কাজ করে ।

তরমুজের বিচি কি খাওয়া যায়?

হ্যাঁ, তরমুজের বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা চুলের জন্য অনেক বেশি কার্যকারী । এছাড়া তরমুজের বিচিতে উপস্থিত অ্যামিনো এসিড চুলকে করে তোলো মজবুত ।  তাজা তরমুজের বিচি ব্যবহার করে চা পান করতে পারেন আপনি; এটি শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের পাথর বের করে দিতে কাজ করে । এতে শরীরের পেশি ও হৃদপিন্ড ভালো থাকবে । তরমুজের বিচি মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে । পুরুষের কামশক্তি বাড়াতেও কাজ করে এটি । তাই তরমুজের বিচি ভাজা খাওয়ার অভ্যাস করলে অনেক উপকার পাওয়া যায় ।