আমাদের সবার জীবনেই অনুসরনীয় বা অনুকরণীয় এমন কেউ না কেউ আছেন যার কথাবার্তা, আচারণ ও ব্যক্তিত্ব আমাদের মনে গভীরভাবে ছাপ ফেলে যায় । কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন কিভাবে তারা সবার প্রিয় হয়ে উঠলেন?

একটু ভেবে দেখুন, তারা আসলে নিজের সুন্দর চেহারার কারণে আপনার নিকট প্রিয় নন, বরং প্রিয় হওয়ার পেছনে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে । তারা সকলের নিকট প্রিয় হওয়ার কারণ হচ্ছে তাদের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব । নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থপানের মাধ্যমে আপনিও তাদের মত সকলের আকাঙ্খিত হয়ে উঠতে পারেন । কিন্তু মনে রাখতে হবে সকলের নিকট আকাঙ্খিত হতে চাইলে আপনাকে একজন ভালো মানুষ হতে হবে । এরপর আসবে অন্যসব দিক । আসুন কিভাবে নিজের ব্যক্তিত্বকে বিকাশ করতে পারি জেনে নেওয়া যাক ।

how-to-develop-your-personality-in-bangla
Image by Gerd Altmann from Pixabay

পরামর্শ-০১ : নিজের সুন্দর ও পৃথক একটি ব্যক্তিত্ব সকলের নিকট তুলে ধরার চেষ্টা করুন । কারো দেখাদেখি নয়, বরং সবাই যেন আপনার অনুসরণ করতে চায় নিজেকে সেভাবেই গড়ে তুলতে চেষ্টা করুন । এজন্য যেমন আছেন তেমনই থাকার চেষ্টা করুন । জোর পূর্বক কোন কিছু নিজের উপর চাপিয়ে দিতে যাবেন না ।

পরামর্শ-০২ : মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন । যখন যে কাজটি করছেন তখন অন্য কোন দিক মন না দিয়ে শুধু সেই কাজটিতেই মনোযোগ দিন । অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে যখন যেখানে থাকবেন তখন শুধু সেখানেই মনোযোগ রাখুন, আবার পরিবার বা বন্ধু মহলে থাকা অবস্থায় তখন শুধু তাদের সাথেই সময় কাটান । এভাবেই নিজেকে ব্যবহার করতে পারেন ।

পরামর্শ-০৩ : অন্যের নিকট থেকে আপনি যে সম্মানটা আশা করেন, ঠিক তেমনিভাবেই অন্যদেরকেও সম্মান করতে শিখুন । ছোটদের স্নেহ দিন এবং বড়দের শ্রদ্ধা করুন ।

পরামর্শ-০৪ : অফিসে আপনার চেয়ে নিজের পদের সকলের সাথে আদবের সহিত কথা বলুন । একজন রিক্সা চালায় বলেই যে তাকে তুই বলে সম্বধন করতে হবে, বা বাসার কাজের লোকটি আপনার বয়সে বড় হওয়া সত্ত্বেও কাজের লোক বলে তাকে অপমান করে কথা বলার অধিকার আপনার নেই । যে ব্যক্তি নিজের চেয়ে ছোট পদের ব্যক্তিদের সাথে ভালো আচরণ করেন না, তিনি কখনোই একজন ভালো মানুষ হিসেবে গণ্য হতে পারেন না ।

পরামর্শ-০৫ : অন্য কারো ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন না । মনে রাখতে হবে, আপনার নিজেও একটি ব্যক্তিগত জীবন আছে যেখানে অন্য কারো হস্তক্ষেপ আপনার কখনোই পছন্দ হবে না । তাই যদি হয় তবে কেন অন্যের ব্যাপারে নাক গালাতে যাবেন?

পরামর্শ-০৬ : ফরমাল বা খুব দামী পোশাক পরিধান করে সবসময় সেজেগুজে থাকলেই স্মার্টনেস আসবে তা কিন্তু নয়, তবে একেবারে অপরিষ্কার থাকা যাবে না । সবসময় নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখার চেষ্টা করবেন । আপনার শরীরের দুর্গন্ধে যেন অন্য কারো সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ রাখুন, আপনার শরীরের দুর্গন্ধের কারণে অন্যের সমস্যা হলো তো আর আপনাকে স্মার্ট হিসেবে তুলে ধরতে পারবে না । শরীরের পোশাক যেমন হোক, সেটি যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর পরিপাটি হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ।

how-to-develop-your-personality-in-bangla
Image by Peggy und Marco Lachmann-Anke from Pixabay

পরামর্শ-০৭ : প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলঅ থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং অন্যদেরও এব্যাপারে উৎসাহ দিবেন না । বেশি কথা বলাটািই কিন্তু স্মার্টনেসের লক্ষণ নয়, বরং পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জোড়দার কথা বলুন । অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বা মন্তব্য জীবনের সকল ক্ষেত্রেই আপনার ব্যক্তিত্বকে খাটো করে তুলতে পারে । একটু লক্ষ্য করে দেখুন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফেসবুকের একটি কমেন্ট আপনাকে অন্যের চোখে কতোটা খাটো করে ফেলে ।

পরামর্শ-০৮ : নিজেকে ব্যক্তিত্ববান হিসেবে দেখাতে গিয়ে আবার অতিরিক্ত মুড বা ভাব দেখাতে যাবেন না কিন্তু । অতিরিক্ত মুড বা ভাব দেখালেই কউ স্মার্ট হয়ে যায় না, বরং আপনার আলগা এই ভাগ আরো নিজের স্মার্টনেস কমিয়ে দেয় ।

পরামর্শ-০৯ : আয়ত্ব করুন সৃজনশীলভাবে কথা বলার অভ্যাস । আপনি যদি সুন্দরভাবে গুছিয়ে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন তাহলে সকলে অবশ্যই আপনার কথার মূল্য দিতে বাধ্য হবে । সে সাথে ঘরের বাইরেও এড়িয়ে চলুন অঞ্চলিকতাকে । কথা বলার সময় ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন । এমানভাবে কথা বলুন যেন সকলেই আপনার কথা বুঝে । বাঁকা বা জটিল কথা বলে কখোনই নিজেকে স্মার্ট প্রমাণ করতে চাইলে আপনি বোকা বনে যাবার সম্ভাবনাই বেশি । এজন্য অবশ্যই সকলকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করুন ।

পরামর্শ-১০ : আপনি কথা বলার সময় আই কন্টাক্ট কারার চেষ্টা করবেন এবং হাসি মুখে কথা বলতে চেষ্টা করবেন । এতে আপনার কথার প্রতি আপনার নিজের আস্থা প্রকাশ পাবে । আপনার আশে-আশের মানুষগুলোও আপনার আস্থা খুঁজে পাবে ।

পরামর্শ-১১ : কথা বলার সময় সুন্দর সুন্দর শব্দ চয়ন করতে চেষ্টা করুন, নিজের মাতৃভাষাকে ভালোভাবে আয়ত্বকরে শব্দভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করুন । অন্য কোন ভাষায় কথা বলার পূর্বে নিজের ভাষা সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত হউন । যে লোক নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না, সে কখনোই একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ হতে পারেন না ।