- ১.ইনসুলিন কী?
- ২.মানবদেহে ইনসুলিনের কাজ
- ৩.এটি কখন ব্যবহৃত হয়?
- ৪.মানবদেহে ইনসুলিনের অভাবে সংঘটিত রোগ :
ইনসুলিন কী?
মানব ইনসুলিন হলো একটি অত্যাবশ্যক প্রধান হরমোন যা অগ্ন্যাশয়ে উৎপাদন হয়। এটি এক এ ধরনের পলিপেপটাইড, যা শর্করা (গ্লুকোজ) রক্ত থেকে কোষের মধ্যে প্রবেশ করা নিয়ন্ত্রণ করে । গ্লুকোজ হল শরীরের জ্বালানীর প্রধান উৎস, যা খাদ্যে পাওয়া কার্বোহাইড্রেট থেকে প্রাপ্ত এবং এটি সারা শরীর জুড়ে কোষে শক্তি সরবরাহ করে। অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো (আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহেন্স-এর বিটা কোষ) থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়।
Insulin by Nick Youngson CC BY-SA 3.0 Pix4free |
মানবদেহে ইনসুলিনের কাজ
ইনসুলিন শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, বিশেষ করে:
১. ইনসুলিন রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে ।
২. যে ক্ষেত্রে শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গ্লুকোজ থাকে, ইনসুলিন লিভারে অতিরিক্ত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেন হিসাবে সঞ্চয় করতে সাহায্য করে। এই সঞ্চিত গ্লাইকোজেন রক্তের প্রবাহে ফিরে যেতে পারে যখন রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়, যেমন খাবারের মধ্যে বা শারীরিক কার্যকলাপের সময়।
৩. ইনসুলিন চর্বি সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে। যখন ইনসুলিনের মাত্রা বেশি থাকে, তখন এটি শরীরকে চর্বি কোষে অতিরিক্ত শক্তি সঞ্চয় করার সংকেত দেয়।
৪. উচ্চ ইনসুলিনের মাত্রাও চর্বি ভাঙ্গনকে বাধা দেয়। যখন ইনসুলিন কম থাকে, শরীর শক্তির জন্য চর্বি অ্যাক্সেস করতে পারে, যেমন উপবাস বা তীব্র শারীরিক কার্যকলাপের সময়।
৫. প্রোটিন সংশ্লেষণে ইনসুলিনের ভূমিকা রয়েছে, কোষে অ্যামিনো অ্যাসিড গ্রহণকে উৎসাহিত করে এবং পেশী বৃদ্ধি ও মেরামতকে সহায়তা করে।
ইনসুলিন ব্যবহৃত হয় নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে :
i. কিডনি ও যকৃতের জটিলতা থাকলে ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে। জন্ডিস হলে সাময়িকভাবে ওষুধ বন্ধ রেখে ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে।
ii. শর্করা আকস্মিকভাবে অনেক বেড়ে গেলে ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস ও হাইপার অসমোলার কমা নামের জীবননাশী জটিলতা হতে পারে।
iii. টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ওষুধ কাজ করে না। এদেরকে ইনসুলিন নির্ভর হয়ে বেঁচে থাকতে হয়।
iv. গর্ভাবস্থায় ও শিশুকে স্তন্যপান করানোর সময় সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে ইনসুলিন। এ অবস্থায় সকল ধরনের ওষুধ বন্ধ করে ইনসুলিন দিতে হবে।
মানবদেহে ইনসুলিনের অভাবে সংঘটিত রোগ :
i. মানবদেহে ইনসুলিনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়।
ii.
Diabetic coma এবং Insulin shock: Diabetic coma বিভিন্ন কারণে হতে পারে
যেমন বেশি পরিমাণে ইনসুলিন গ্রহণ অথবা কম পরিমাণে। রোগীর মুখ, জিহ্বা
শুকিয়ে আসে, পিপাসা অনুভূত হয়। মাথাব্যথা, বমিভাব, দুর্বলতা প্রভৃতি লক্ষণ
দেখা যায়।
iii. Retionopathy: ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে চোখে ছানি, Glucoma এবং অন্যান্য চোখের অসুখ বেশি হতে পারে।
iv. Coronary artery disease : হৃৎপিণ্ড ও সংবহনতন্ত্রের অসুখ ও জটিলতা বেশি দেখা যায়।
v. Neuropathy: স্নায়ু পেশীর অসুস্থতা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, প্যারালাইসিস প্রভৃতি দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে দেখা দেয়।
vi. মুখে ঘা, মাড়ির ক্ষত, দাঁত পড়ে যাওয়া, gingivitis, দাঁতের ক্ষয় ইত্যাদি ডায়াবেটিসে বাড়ে।
0 মন্তব্যসমূহ