সূচিপত্র:
- ভূমিকা
- ১. দ্রুত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন
- ২. ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন
- ৩. নিরামিষভোজী হওয়া বিবেচনা করুন
- ৪. দৈনিক ফ্লস ব্যবহার করুন
- ৫. ডিম খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন
- ৬. ধূমপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করুন
- ৭. প্রতিদিন সূর্যের আলো নিন
- ৮. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
- ৯. চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন
- ১০. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
- ১১. সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখুন
- ১২. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
- ১৩. প্রাণী পালনের কথা ভাবুন
- উপসংহার
![]() | |
|
ভূমিকা
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা করে যাচ্ছেন কীভাবে মানুষ আরও সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন পেতে পারে। তাদের গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে কিছু কার্যকরী অভ্যাস, যেগুলো দৈনন্দিন জীবনে মেনে চললে আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি জীবনও হয়ে উঠবে আনন্দময়। চলুন জেনে নেওয়া যাক দীর্ঘায়ুর জন্য স্বীকৃত ১৩ টি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি:
১. দ্রুত
হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দ্রুত গতিতে হাঁটেন, তাদের আয়ু তুলনামূলক বেশি হয়। জেরনটোলজিক্যাল কনফারেন্সে যে রিপোর্টটি উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে বলা হয়, ৯ বছর ধরে মানুষের হাঁটার গতির ওপর গবেষণা চালিয়েছে তারা । এতে দেখা যায়, যারা কম গতিতে হাঁটেন, তাদের মধ্য থেকে ৭৭ শতাংশ; যারা মাঝারি গতিতে হাঁটেন, তাদের ৫০ শতাংশ এবং যারা দ্রুতগতিতে হাঁটেন, তাদের মধ্য থেকে ২৭ শতাংশ এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন । প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
২. ইতিবাচক
মনোভাব বজায় রাখুন
ইতিবাচক মানসিকতা পোষণ ও আনন্দে থাকলে দীর্ঘায়ু হওয়া যায় । শুধু মানুষ নয়, অন্যান্য প্রাণীর জন্যও এ কথা প্রযোজ্য বলে দাবি করেছেন গবেষকরা । ১৬০টির বেশি গবেষণার ফল পর্যালোচনা করে ‘অ্যাপ্লাইড সাইকোলজি: হেলথ অ্যান্ড ওয়েল বিইং’ জার্নাল এ তথ্য প্রকাশ করে । বেশিরভাগ গবেষণার ফলই বলে দেয়, আনন্দে থাকার সঙ্গে দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থের সম্পর্ক গভীর । গবেষণাগারেও দেখা গেছে, ইতিবাচক মনোভাব শরীরের হরমোন নিঃসরণে তারতম্য ঘটায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । এমনকি হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে । তাই প্রতিদিন হাসুন, ভালো সময় কাটান এবং মনকে চাপমুক্ত রাখুন।
![]() |
AI-generated image from Fotor |
৩. নিরামিষভোজী
হওয়া বিবেচনা করুন
গবেষণায় দেখা গেছে, নিরামিষভোজীরা সাধারণত আমিষভোজীদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচেন। কারণ অধিক ফ্যাট সমৃদ্ধ আমিষ গ্রহণ ধমনীতে জাঙ্ক তৈরি করে, রক্তচাপকে বাড়িয়ে তোলো এবং হৃদরোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি করে । অন্যদিকে উদ্ভিজ্জ খাবারে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্য প্রতিরোধ করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তবে "প্রক্রিয়াজাত নিরামিষ খাবার" এড়িয়ে চলাই উত্তম।
৪. দৈনিক ফ্লস
ব্যবহার করুন
প্রতিদিন দু’বার দাঁত ব্রাশ করলেও দাঁতের মধ্যবর্তী জীবানু পরিষ্কার করতে পারে না । গবেষণায় দেখা গেছে, মুখের জীবাণু হৃদযন্ত্রের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। তাই প্রতিদিন অন্তত একবার দাঁতের ফাঁক ফ্লস দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
৫. ডিম খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন
ডিম এই গ্রহের সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে একটি । তবে বেশি বেশি ডিম খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। ডিম অত্যন্ত
পুষ্টিকর হলেও, অতিরিক্ত ডিম খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা
পরামর্শ দেন, সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৬টি ডিম খাওয়া এবং প্রয়োজনে কুসুম বাদ দিয়ে ডিম
খাওয়ার অভ্যাস করতে।
৬. ধূমপান
সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করুন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, প্রতি বছর ধূমপানের কারণে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ধূমপান হচ্ছে- ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস, এমফিসমা এবং অন্তত ১৩ প্রকার ক্যান্সারের মূল কারণ । ধূমপান ত্যাগ করলে উক্ত রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকিঁ ৯০% পর্যন্ত কমে আসে।
৭. প্রতিদিন
সূর্যের আলো নিন
ভিটামিন-ডি শরীরের হাড় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কম বয়সে হাঁড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া ও ভিটামিন ডি-এর অভাব জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকিঁ থাকে ।প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট সকালের সূর্যের আলো গ্রহণ করলে ভিটামিন-ডি-এর ঘাটতি দূর হয় এবং শরীর থাকে সুস্থ।
৮. পর্যাপ্ত
ঘুম নিশ্চিত করুন
প্রতিদিন ৭-৮
ঘণ্টা গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম শরীরের কোষ মেরামত করে এবং মস্তিষ্ককে পুনরুজ্জীবিত
করে। দীর্ঘদিন ঘুমের ঘাটতি হৃদরোগ, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৯. চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন
দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রতিদিন কিছু সময় মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা মনপ্রাণে কোনো শখের কাজে যুক্ত থাকুন।
১০. নিয়মিত
শরীরচর্চা করুন
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক কসরত করুন। এটি শুধু ওজন নিয়ন্ত্রণেই সাহায্য করে না, বরং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যও উন্নত করে এবং দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করে। তাই নিজের আয়ু বৃদ্ধি করতে হলে রুটিন মেনে প্রতিদিন ওয়ার্ক আউট, যোগব্যায়াম অথবা অত্যন্ত আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা হাঁটতে/দৌড়াতে/খেলতে হবে ।
![]() |
AI-generated image from Fotor |
১১. সামাজিক
সম্পর্ক বজায় রাখুন
আশেপাশের বন্ধু ও পরিবার-পরিজনদের সাথে সুসম্পর্ক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। যে মানুষেরা সবচেয়ে বেশি সামাজিক তাদের আয়ুস্কাল কম-সামাজিক মানুষের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে । নিয়মিত বন্ধু ও পরিবারের
সাথে যোগাযোগ রাখুন এবং জীবনের আনন্দ ভাগাভাগি করুন।
১২. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউড হেলথ এর গবেষণায় ১১ হাজার ১৬০ জন মানুষের উপর ৩০ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। গবেষকরা দেখতে পান, যারা পর্যাপ্ত পানি পান করেন না, তাদের জীবনকাল কম এবং জীবনকালে দীর্ঘমেয়াদি রোগ (যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস) হওয়ার ঝুঁকি বেশি। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের কোষসমূহ সঠিকভাবে কাজ করে, যকৃত ও কিডনি ভালো থাকে, ত্বক সুন্দর থাকে এবং প্রদাহ (inflammation) কম হয়—সবই দীর্ঘায়ুতে অবদান রাখে।
১৩. প্রাণী
পালনের কথা ভাবুন
গবেষনায় দেখা গেছে একজন পশু/প্রাণী প্রেমিক যিনি তার পছন্দের প্রাণী পোষেন তাদের
রক্তচাপ কম হয়; হৃদরোগ এবং বিষণ্নতায়ও কম ভোগে । যদি প্রাণী পোষা আপনার ভালো লাগে,
তবে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
উপসংহার
দীর্ঘ আয়ু পেতে
কোনো যাদু নেই, তবে কিছু সহজ ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম মেনে চললে জীবন হতে পারে আরও দীর্ঘ
এবং স্বাস্থ্যকর। আজ থেকেই এই উপায়গুলো অনুসরণ করে আপনার জীবনকে আরও সুন্দর করে
তুলুন।
0 মন্তব্যসমূহ