পেটের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আপাত দৃষ্টিতে সামান্য মনে হলেও আপনার অবহেলার কারণে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এই বিরক্তিকর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় মূলত আমাদের খাদ্যাভ্যাস, জীবন যাপনের নানা ভুলের কারণেই হয়ে থাকে। সুতরাং খাদ্য ও দৈনন্দিন জীবন সংক্রান্ত কিছু ব্যাপারে একটু পরিবর্তন আনতে পারলেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা  থেকে চিরকাল দূরে থাকা সম্ভব। 

Image from Pixabay 


খাবার খুব ভালো করে চিবিয়ে খান

তাড়াহুড়ো করে খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকে অনেকেরই, আর একারণে একটু চিবিয়েই খাবার গিলে ফেলেন। এই অভ্যাসটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করে। কারণ এতে খাবার হজম হতে অনেক দেরি হয় এবং হজমে নানা সমস্যা দেখা দেয়। খাবার খাওয়ার পরই ঘুমাতে যাবেন না :


খেয়েই ঘুমিয়ে পড়া অনেক বাজে একটি অভ্যাস। খাবার খাওয়ার পর সাথে সাথে শুতে চলে যাওয়ার কারণে খাবার সঠিকভাবে হজম হওয়ার সময় পায় না। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সৃষ্টি হয়। খাবার পর একটু হাঁটাহাঁটি করে নিলে খাবার হজম ত্বরান্বিত হয়।

চা/কফির পরিমাণ কমিয়ে আনুন :

চা/কফি আমরা দেহকে সতেজ রাখতে পান করে থাকি। কিন্তু অনেকেই দিনে ৩ কাপের বেশি চা বা কফি পান করেন যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। চা/কফি দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই একটু কমিয়েই পান করুন চা/কফি। 

প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন :

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূরে রাখার খুব কার্যকরী উপায় হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং পানীয় পান করার অভ্যাস। পানি দেহের ক্ষতিকর টক্সিন দূরে রাখে এবং খাবার হজমে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান :

খাদ্যতালিকায় পরিমিত পরিমাণে মাছ, মাংস, ডিম রাখা প্রয়োজনীয় কিন্তু এইসকল খাবারের পাশাপাশি প্রয়োজন আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া। যদি মাংস বা মাছের তরকারী আলু, শিম, মটরশুঁটি জাতীয় খাবারের সাথে মিশিয়ে রান্না করা হয় তাহলে তা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা Gastric problem দূরেই রাখবে। এছাড়াও ডাল, বুট জাতীয় আঁশযুক্ত খাবার রাখুন খাদ্যতালিকায়

নিয়মিত হাঁটাচলা ও শারীরিক পরিশ্রম করুন :

হাঁটাচলা ও শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে দেহের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। এছাড়াও নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস খাবার হজমে অনেক বেশি সহায়ক। তাই এই অভ্যাসটি আয়ত্ত করুন ৷


গ্যাষ্ট্রিক নিয়ন্ত্রনের উপায়

পেটে গ্যাষ্ট্রিক সমস্যায় যারা ভুগে থাকেন তারাই বোঝেন এটি কতো যন্ত্রণার। একটু ভাজাপোড়া খেয়েছেন অথবা একটু না হয় বেশিই খেয়ে ফেলেছেন, তখনই শুরু হয়ে যাবে অস্বস্তিকর গ্যাষ্ট্রিক সমস্যা। কিন্তু এই গ্যাষ্ট্রিক সমস্যা থেকে কিন্তু মুক্তি পাওয়া খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। শুধু একটু নজর রাখতে হবে নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি। জেনে নিতে হবে কোনটি খাওয়া উচিত হবে কোনটি হবে না।


যা যা খাবেন নাঃ

১) ডাল ও ডাল জাতীয় খাবার ডাল, বুট, ছোলা, বীণ, সয়াবিন ইত্যাদি ধরণের খাবার গ্যাস উদ্রেককারী খাবার। এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, সুগার ও ফাইবার যা সহজে হজম হতে চায় না। ফলে গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করে পেটে। 

২) ব্রকলি, পাতাকপি, বাঁধাকপি এইধরনের সবজিগুলোতে রয়েছে ‘রাফিনোজ' নামক একধরণের সুগার উপাদান যা পাকস্থলীর ব্যাকটেরিয়া ফারমেন্ট না করা পর্যন্ত হয় হয় না। এবং এই অবস্থায় পেটে গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

৩) দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার পর যদি দেখেন পেটে গ্যাস হচ্ছে তার অর্থ হচ্ছে আপনি লাক্টোজ ইন্টলারেন্ট অর্থাৎ আপনার দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার হজমে সমস্যা রয়েছে। হজম হয় না বলেই এগুলো আপনার পেটে গ্যাষ্ট্রিক উদ্রেকের জন্য দায়ী।

৪) আপেল ও পেয়ারা আপেল ও পেয়ারাতে রয়েছে ফাইবার এবং ফ্রুক্টোজ ও সরবিটোল নামক সুগার উপাদান যা সহজে হজম হতে চায় না। এতে করেও গ্যাষ্ট্রিক হয় পেটে। ৫) লবণাক্ত খাবার লবণের সোডিয়াম অনেক বেশি পানিগ্রাহী। অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার খেলে দেহে পানি জমার সমস্যা দেখা দেয়। পাকস্থলীতেও সমস্যা শুরু হয় ও খাবার হজম হতে চায় না।


যা যা খাবেনঃ

১) শসা শসা পেট ঠাণ্ডা রাখতে অনেক বেশি কার্যকরী খাদ্য। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাষ্ট্রিকের উদ্রেক কমায়।

২) দই দই আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে করে দ্রুত খাবার হজম হয়, ফলে পেটে গ্যাষ্ট্রিক হওয়ার ঝামেলা দূর হয়।

৩) পেঁপে পেঁপেতে রয়েছে পাপায়া নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলেও গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা কমে ।

৪) কলা ও কমলা কলা ও কমলা পাকস্থলীর অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। এতে করে গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও কলার স্যলুবল ফাইবারের কারণে কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে। 

৫) আদা আদা সবচাইতে কার্যকরী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার। পেট ফাঁপা এবং পেটে গ্যাষ্ট্রিক হলে আদা কুচি করে লবণ দিয়ে কাঁচা খান, দেখবেন গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা সমাধান হবে।-আমার সংবাদ।


কিছু ঘরোয়া উপায়

গ্যাসের সমস্যায় ভোগে না এমন লোককে খুঁজে পাওয়া দায়। ফাস্ট ফুড, ব্যস্ত জীবনযাত্রার যুগে গ্যাস, অম্বল প্রায় ঘরোয়া রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনও ঘরে গেলেই অন্তত গ্যাসের এক পাতা ওষুধ অবশ্যই মিলবে। তবে কী গাদা গাদা গ্যাসের ওষুধ খেয়েও সমস্যা দূর হয় না। কিন্তু ঘরোয় কিছু উপায় আছে যেগুলি প্রয়োগ করলে গ্যাস-অম্বলকে দূরে রাখা যায়। প্রাকৃতিক ও সহজে পাওয়া যায় এমন সব জিনিস দিয়ে গ্যাস, বুক জ্বালা-অম্বল দূরে রাখুন-

কলা :- সারাদিনে অন্তত দুটো কলা খান। পেট পরিষ্কার রাখতে কলার জুড়ি মেলা ভার ।

ঠান্ডা দুধ :- পাকস্থলির গ্যাসট্রিক অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দেয় ঠান্ডা দুধ। এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ পান করলে অ্যাসিডি দূরে থাকে।


দারুচিনি :- হজমের জন্য খুবই ভাল। এক গ্লাস জলে আধ চামচ দারুচিনির গুঁড়ো দিয়ে ফুটিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে গ্যাস দূরে থাকবে।

জিরে জিরে পেটের গ্যাস, বমি, পায়খানা, রক্তবিকার প্রভৃতিতে অত্যন্ত ফলপ্রদ। জ্বর হলে ৫০ গ্রাম জিরা আখের গুড়ের মধ্যে ভালো করে মিশিয়ে ১০ গ্রাম করে পাঁচটি বড়ি তৈরি করতে হবে। দিনে তিনবার এর একটি করে বড়ি খেলে ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে যাবে।


লবঙ্গ :- ২/৩টি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চুষলে একদিকে বুক জ্বালা, বমিবমিভাব, গ্যাস দূর হয়। সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। এলাচ :- লবঙ্গের মত এলাচ গুঁড়ো খেলে অম্বল দূরে থাকে। পুদিনা পাতার জল :- এক কাপ জলে ৫টা পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খান। পেট ফাঁপা, বমিভাব দূরে রাখতে এর বিকল্প নেই ।

আমলা :- আমলা টুকরো করে রোদে দিয়ে খান কাজে দেবে। পেটে গ্যাস ও বদহজমজনিত সমস্যা সমাধানে আদা খুব উপকারী। খাবারে আদা যোগ করে বা কিছু পরিমাণ আদা চিবিয়ে রসটুকু গ্রহণ করলে পেটে গ্যাস প্রতিরোধ করা যায়। আদা : আদা থেতো করে খান দখবেন অম্বল পালিয়েছে। এছাড়াও খাবারে সরষে যোগ করুন : সরিষে গ্যাস সারাতে করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন খাবারের সাথে সরষে যোগ করা হয় যাতে সেইসব খাবার পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে না পারে।


রেফান্সসমূহঃ 

Gastric Problem: Causes, Symptoms & Treatment,

Gas and gas pains