nutritious-diet-food-for-the-brain-and-nerves-in-bangla

গবেষণা থেকে দেখা গেছে, আপনার শরীরকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখার জন্য ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন তেমনি মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুগুলোকেও সচল রাখার জন্য এসব খাবারের প্রয়োজন । গবেষকরা তাই এসব খাবারের নাম দিয়েছেন ব্রেইন ফুড বা মস্তিষ্কের খাদ্য । 

মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে খাবার খান

আপনার মস্তিষ্ক সচল রাখতে অবিরাম জ্বালানি প্রয়োজন । আর এ জন্য দুবার বা তিনবার বড় ধরনের খাবারের বদলে বারবার অল্প করে খাবার খাবেন । বেছে নেবেন পুষ্টিকর খাদ্য যেমন তাজা ফলমূল, শাকসবজি, খাদ্যশস্য, শিম, মুরগির মাংস এবং মাছ । পানি পান করবেন প্রচুর পরিমাণে । আপনার মস্তিষ্কের কাজের জন্য প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় । মানসিক চাপে আপনার আপনার মস্তিষ্ক পানিশূ্ন্য হয়ে পড়ে । তাই যখনই আপনি ক্লান্ত থাকবেন, দুশ্চিন্তায় থাকবেন কিংবা চাপের মধ্যে থাকবেন তখন অতিরিক্ত পানি পান করবেন । কপি এবং কোলা সীমিত পরিমাণ গ্রহণ করবেন । কারণ এসব পানীয়তে ক্যাফিন থাকে যা মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে ।

বিভিন্ন ধরনের খাবার খান 

কেবল মাত্র একটি নির্দিষ্ট খাবারে সীমাবদ্ধ থাকবেন না । আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি । আপনার স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের দৈনন্দিন কাজ চালাতেও প্রয়োজন হরিক রকম পুষ্টি । আর এ কারণে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ করতে হবে । পুষ্টির জন্য খাদ্যই হলো চমৎকার উৎস । 

গবেষনায় দেখা গেছে, অনেক ধরনের ভিটামিন বি শরীরের বাড়তি অনেক কাজে এলেও মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুর স্বাভাবিক কাজেও সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । অধিকাংশ বি-ভিটামিন এবং ফলিক এসিড গ্রহণের ফলে আপনার মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র বিশেষ লাভবান হয় । 



ভিটামিন বি১ (থায়ামিন): সুস্থ মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকোষসমূহের জন্য এই ভিটামিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । সম্পূর্ণ খাদ্যশস্য এবং খাদ্যশস্য থেকে তৈরি খবার যেমন রুটি, ভাত এবং পেস্তায় এই ভিটামিন থাকে ।

ভিটামিন বি৫ (প্যানটোথেটিক এসিড): এটা কো-এনজাইম গঠন করে, যা স্নায়ুর উদ্দীপনা প্রেরণে সাহায্য করে । এই ভিটামিন আপনি পেতে পারেন মাংস, মাছ, সম্পূর্ণ খাদ্যশস্য, শিম বা মটর শুঁটি, দুধ, শাকসবজি এবং ফল থেকে ।

ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন): এ ভিটামিন ট্রিপটোফ্যানকে সেরোটোনিনে রূপান্তর করে । সেরোটোনিন হলো মস্তিষ্কের রাসায়নিক উপাদান । এই ভিটামিন বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় যেমন-মুরগির মাংস, মাছ,লিভার এবং কিডনি । সম্পূর্ণ খাদ্যশস্য, বাদাম এবং শিম থেকেও আপনি এই ভিটামিন পেতে পারেন ।

ভিটামিন বি১২ (সায়ানোকোবেলামিন): এটা রক্তের লোহিত কণিকার পরিপক্কতার সাহায্য করে, প্রোটিন গঠনে সাহায্য করে এবং স্নায়ুকোষগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করে । ডিম, মাংস, মাছ, দুধ এবং দুধজাত খাবার থেকে আপনি এই ভিটামিন পেতে পারেন ।

ফলিক এসিড : মস্তিষ্কের ফ্যাটি এসিডের বিপাকক্রিয়ায় এই ভিটামিন অপরিহার্য । ফলিক এসিড খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় যেমন-কলা, কমলার রস, খাদ্যশস্য থেকে প্রস্তুতকৃত খবার, লেবু, স্ট্রবেরি, ফুটি বা খরমুজ, শাকযুক্ত সবজি, শিম ও মটর শুঁটি ইত্যাদি । গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ফলিক এসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ ফলিক এসিডের মাত্রা কম থাকলে গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের স্নায়ুজনিত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায় ।

স্নায়ুকে ক্ষয় করবেন না 

স্নায়ুগুলোর কাজকে সঠিকভাবে পালন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কিছু মিনারেল বা খনিজ উপাদান । আপনার স্নায়ু যদি ক্ষয় হতে থাকে তাহলে আপনার মস্তিষ্ক তথা সারা শরীর অকেজো হয়ে পড়বে । তাই স্নায়ুর ক্ষয় রোধ করতে এবং স্নায়ুগুলোকে উজ্জীবিত করতে আপনাকে নিচের মিনারেলগুলো গ্রহণ করতে হবে :

ম্যাগনেশিয়াম : এটা পাওয়া যায় সম্পূর্ণ খাদ্যশস্য, শিম বা মটর জাতীয় বীজ, বাদাম এবং সবুজ শাকসবজিতে ।

পটাশিয়াম : এটা পাওয়া যায় খুবানি, আভোকাদো, কলা, খরমুজ, মোসম্বি লেবু, কমলা, শুকনো খেজুর বা আলু বোখারা, স্ট্রবেরি, আলু, মাংস এবং মাছ প্রভৃতি খাবারে ।

ক্যালসিয়াম : এটা পাওয়া যায় দুধ ও দুধজাত খাদ্য যেমন-পনির এবং দই, শিম, ফুলকপি, বিট, ভক্ষণীয় কাঁটা যুক্ত মাছ ইত্যাদি খাবারে ।

মনে রাখবেন, ওষুধ নয়, খাদ্যকেই অগ্রাধিকার দেবেন । প্রয়োজনে পরামর্শ নেবেন চিকিৎসকের ।