বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে সর্ম্পকে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত ৷ বিশ্বব্যাপি প্রতি বছরের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ও বাংলা ভাষা-ভাষীরা ১লা ফাল্গুন দিবসটি উদযাপন করে থাকে ৷ কিন্তু অনেকেই এর অতীত ইতিহাস জানে না ৷ তাহলে চলুন জেনে নিই কিভাবে ভ্যালেন্টাইন ডে শুরু হলো ৷ 

happy-valentine-day-history-celebration-and-poetry-in-bangla
Image by wichai bopatay from Pixabay


ভ্যালেন্টাইন ডে‘র ইতিহাস

তৃতীয় শতাব্দীর রোমে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের একজন  ধর্মযাজক ছিলেন। সেই সময় রাজ্য ক্ষমতায় ছিলেন সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ।  তিনি মনে করতেন- অবিবাহিত পুরুষরা, যাদের স্ত্রী এবং সংসার আছে তাদের চেয়ে, অধিকতর উন্নত যোদ্ধা হতে পারে। তাই তার সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তরুণদের বিয়েকে আইন বহির্ভূত বলে ঘোষণা করেন।  ভ্যালেন্টাইন এই আইন জারিকে অনৈতিক বলে বিবেচনা করেন তথা ক্লডিয়াসের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন এবং তরুণ প্রেমিকদের বিয়ে সম্পন্ন করার কাজটি গোপনে চালিয়ে যেতে থাকেন। ভ্যালেন্টাইনের কার্যকলাপ সম্রাটের কাছে প্রকাশ পেলে ক্লডিয়াস তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন এবং কারাগারে নিক্ষেপ করেন । 

অন্য লোককাহিনীর মতে, কারাগারে বন্দি থাকার সময় ভ্যালেন্টাইন এক তরুণীর প্রেমে পড়েন বলে ধারণা করা হয়; তরুণীটি ছিল কারাধ্যক্ষের মেয়ে। সে কারাভ্যন্তরেই ভ্যালেন্টাইনের সাথে দেখা করত। মৃত্যুর আগে তিনি তরুণীটির কাছে চিঠি লেখেন, যার শেষে স্বাক্ষর ছিল 'ফ্রম ইউর - ভ্যালেন্টাইন'-এটি এমন এক - অভিব্যক্তি যা এখনও ব্যবহৃত হয় ৷ কিংবদন্তির আড়ালে ভ্যালেন্টাইন অস্পষ্ট, ধোঁয়াটে— তবে তার কাহিনী বা উপকথা নিশ্চিতভাবেই তাকে প্রকাশ করে সহানুভূতিসম্পন্ন, বীরোচিত এবং সর্বোপরি রোমান্টিক ব্যক্তি হিসেবে। এটা সত্য যে, মধ্যযুগে ভ্যালেন্টাইন ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে সর্বাধিক জনপ্রিয় সেইন্টদের অন্যতম ছিলেন। 

মনে করা হয়, ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপিত হয় ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ সম্ভবত যেটা সংগঠিত হয়েছিল ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারির দিকে। আরো কিছু তথ্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, রোমান বন্দিশালায় নির্যাতিত খ্রিস্টানদের মুক্তি দেওয়ার জন্যও সচেষ্ট ছিলেন । 

উদযাপন

৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের দিকে পোপ গেলাসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা দেন। মধ্যযুগে ফ্রান্সে এবং ইংল্যান্ডে বিশ্বাস জন্মে যে, ১৪ ফেব্রুয়ারি পাখিদের প্রেম-বন্ধনের ঋতু, সেখান থেকেই চালু হলো ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ‘ভ্যালেন্টাইন'স ডে' বা রোমান্সের দিবস হিসেবে পালনের রীতি। কত শতকাল আগে থেকে চেনা ভ্যালেন্টাইন অস্তিত্বমান হয়ে উঠল চার্লস (ডিউক অব অরলিনস)-এর লেখা কবিতায়। কবিতাটি তার স্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছিল, ব্যাটল অব আজিনকোর্ট-এ বন্দি হয়ে যখন তিনি টাওয়ার অব লন্ডনে। 

এই উপহারটি লিখিত হয়েছিল ১৪১৫ সালে, এখন সেটা ব্রিটিশ লাইব্রেরি অব লন্ডনের পান্ডুলিপি সংগ্রহশালায় রক্ষিত আছে। কথিত আছে, কয়েক বছর পর রাজা পঞ্চম হেনরি নিযুক্ত করেন জন লিজেট নামক একজন লেখককে -ভ্যালেন্টাইন নোট কম্পোজ করার জন্য। 

সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে গ্রেট ব্রিটেনে ভ্যালেন্টাইন'স ডে পালন করা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সব শ্রেণির বন্ধু-বান্ধব এবং প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে মমতার ছোট স্মৃতিচিহ্ন কিংবা হাতে লিখিত স্মারকলিপি বিনিময় সাধারণ প্রথায় দাঁড়িয়ে যায়। 

এই শতাব্দীর শেষের দিকে মুদ্রণ প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে হস্তলিখিত পত্রের জায়গায় মুদ্রিত কার্ডের আদান-প্রদান শুরু হয়। এক পর্যায়ে ভালবাসার বাণীসহ ছাপানো কার্ড প্রদান আবেগ প্রকাশের জন্য সহজ পন্থারূপে দেখা দেয়। ডাক বিভাগ অল্প খরচের মাধ্যমে ভ্যালেন্টাইনস ডের অভিনন্দন প্রকাশে জনপ্রিয়তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অবদান রাখে। হাতে তৈরি ভ্যালেন্টাইনস উপহার প্রদান আমেরিকানদের মধ্যে হয় সপ্তদশ শতকের শুরুতে। ১৮৪০ সালে ইস্টার এ. হল্যান্ড ভ্যালেন্টাইনস উপহার বিক্রয় শুরু করেন আমেরিকাতে। ভ্যালেন্টাইনস ডে এখন ক্রিসমাসের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্ড বিনিময়ে উৎসবে পরিণত হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্যালেন্টাইন'স ডে উদযাপিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কানাডা, মেক্সিকো, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ায়। ব্যাপক হারে না হলেও আধুনিক বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ দিবসটিতে আনন্দমুখর হয়ে ওঠে।

কবিতা

লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে,

লিখবো তোমার নাম,

হাজার পাখির সুর দিয়, গাইবো তোমার গান,

তুমি আমার জান, তুমিই আমার প্রান।”


 যখন কেউ কারো জন্য কাঁদে সেটা হল আবেগ। যখন কেউ কাউকে কাঁদায় সেটা হল প্রতারনা। আর যখন কেউ কাউকে কাঁদিয়ে নিজেও কেঁদে ফেলে! সেটাই হল প্রকৃত ভালবাসা!